পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে

আপনি কি ই-পাসপোর্ট করতে চাচ্ছেন? কিন্তু কি কি কাগজপত্র লাগবে তা জানেন না। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনারই জন্য। আজকের এই আর্টিকেলে আমি ই পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে সেই সম্পর্কে জানাবো।

কাজের জন্য, ভ্রমনের জন্য কিংবা শিক্ষা, চিকিৎসার জন্য অনেকেরই বিদেশে গমন করতে হয়। আর বিদেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট যেটি সবাইকেই করতে হয়। তাই পাসপোর্ট করার জন্য কি কি ডকুমেন্টস লাগবে তা জেনে নেয়া প্রয়োজন। 

আপনি ভোটার আইডি বা জন্ম নিবন্ধন দিয়ে ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে পারবেন। আগে যাদের MRP পাসপোর্ট ছিলো তাদেরকেও ই-পাসপোর্ট করতে হবে। এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ই পাসপোর্ট সেবা চালু করে। বর্তমানে পুরো দেশে ই পাসপোর্ট সেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে। 

পাসপোর্টের ক্যটাগরি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রের কিছু পার্থক্য থাকে। কোন পাসপোর্টের জন্য কি কি তথ্য লাগবে তা এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

ই পাসপোর্ট করতে কি কি ডকুমেন্টস লাগে

ই পাসপোর্ট করতে আপনার কি কি ডকুমেন্টস লাগতে পারে তা প্রথমে জেনে নিতে হবে। যারা প্রাপ্তবয়স্ক তাদের এনআইডি কার্ড এবং যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে তাদের ক্ষেত্রে ডিজিটাল জন্ম সনদ লাগবে। আর যারা NID কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন কিন্তু এখনো হাতে পান নি তারা জন্ম নিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্টের আবেদন করতে পারবেন।

যারা সরকারি চাকরিজীবী তাদের GO অথবা NOC ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে। তারপর চেয়ারম্যান কর্তৃক নাগরিক সনদপত্র এবং আপনি যেই পেশায় নিযুক্ত আছেন তার প্রমাণপত্র। 

হারানো বা চুরি হয়ে যাওয়া Passport রি-ইস্যুর জন্য আবেদন করতে গেলে আপনাকে GD কপি অন্যান্য ডকুমেন্টস এর সাথে জমা দিতে হবে। 

সবশেষে ফি প্রদান করতে হয়। পেমেন্ট অনলাইন বা অফলাইন দুইভাবেই করা যায়। তবে অফলাইনে ব্যাংকে করাই ভালো। আপনি ব্যাংকে ফি প্রদান করার পর পেমেন্ট স্লিপটি ডকুমেন্ট এর সাথে সংযুক্ত করে দিবেন।

পাসপোর্ট করতে কি কি জমা দিতে হয়

নিম্নে পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় যেসব ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় তা উল্লেখ করা হলোঃ

  • অনলাইন ই-পাসপোর্ট আবেদন ফর্মের  কপি।
  • ই পাসপোর্ট আবেদনের সামারি/ সারাংশের কপি।
  • ভোটার আইডি কার্ড বা  জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি। ভোটার আইডি না থাকলে জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি। 
  • পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
  • আপনি যেই পেশায় নিয়োজিত আছেন তার প্রমাণ হিসেবে আপনাকে ডকুমেন্টস দিতে হবে। যদি চাকরি করেন তাহলের চাকরির আইডি কার্ড বা এপয়েন্টমেন্ট লেটার, স্টুডেন্ট হলে একাডেমিক সার্টিফিকেট। 
  • ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র ।
  • ইউটিলিটি বিলের ( পানি/গ্যাস/বিদ্যুৎ ) ফটোকপি।
  • ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি প্রদানের বা পেমেন্ট স্লিপের কপি।

ই পাসপোর্ট করতে হলে আপনাকে উপরে উল্লেখিত কাগজগুলো আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে। এছাড়া বয়স, পেশার উপর নির্ভর করে ডকুমেন্টস এর কিছু ভিন্নতা থাকে। যেমনঃ একজন সরকারি চাকরিজীবীর পাসপোর্ট করতে হলে No Objection Certificate, Government Order এর প্রয়োজন হয় তবে, একজন সাধারণ নাগরিকের পাসপোর্ট করতে হলে এসব ডকুমেন্ট এর দরকার হয় না। আবার শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ডিজিটাল জন্ম সনদ লাগে।

নিম্নে পাসপোর্টের ক্যাটাগরি অনুযায়ী আলাদা আলাদা কি কি কাগজপত্রের দরকার হয় তা উল্লেখ করা হলো।

শিশুদের ই পাসপোর্ট করতে কি কি জমা দিতে হয়

পিতা-মাতার সাথে অনেক সময় ছোটদের পাসপোর্ট করার প্রয়োজন পরে। বিদেশে ভ্রমণ কিংবা শিক্ষা, চিকিৎসার জন্য ছোটদের পাসপোর্ট করতে হতে পারে। আর শিশুদের পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে আপনাকে নিম্নোক্ত কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

  • শিশুর অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র।
  • অনলাইন ই-পাসপোর্ট আবেদন ফর্মের  কপি।
  • ই পাসপোর্ট আবেদনের সামারি/ সারাংশের কপি।
  • পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি। 
  • পাসপোর্ট ফি প্রদানের চালানের কপি/ ব্যাংকের পেমেন্ট স্লিপ। 
  • শিশুর টিকা কার্ডের কপি।
  • 3R সাইজের ল্যাব প্রিন্টের ছবি। 

শিশুদের পাসপোর্ট করার জন্য বাবা-মায়ের ভোটার আইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করতে হবে।  আর টিকা কার্ড লাগতেও পারে আবার নাও লাগতে পারে তবে সাথে রাখাই ভালো যদি প্রয়োজন পরে তাহলে অন্য ডকুমেন্টের সাথে জমা দিয়ে দিবেন।

সরকারি চাকরিজীবীদের পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে

আপনি যদি সরকারি চাকরিজীবী হোন তাহলে আপনাকে নিম্নের কাগজপত্র সমূহ জমা দিতে হবে।

  • অনলাইন ই-পাসপোর্ট আবেদন ফর্মের  কপি। 
  • ই পাসপোর্ট আবেদনের সামারি/ সারাংশের কপি। 
  • ভোটার আইডি কার্ড বা  জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি। 
  • পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি। 
  • ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র।
  • ইউটিলিটি বিলের ( পানি/গ্যাস/বিদ্যুৎ ) ফটোকপি। 
  • ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি প্রদানের রিসিপ্টের কপি।
  • NOC ( No Objection Certificate ) সনদপত্র।
  • GO ( Government Order ) সনদপত্র।

NOC হচ্ছে অনাপত্তি সনদপত্র (No Objection Certificate) । কোন সরকারি কর্মকর্তা যদি নিজ প্রয়োজনে পাসপোর্ট করতে চান তখন তাকে তার কর্মস্থল অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয় থেকে অনাপত্তি সনদ পাসপোর্টের অন্যান্য ডকুমেন্টস এর সাথে সংযুক্ত করতে হবে।

GO হচ্ছে সরকারি চাকরিজীবীদের যদি কোন কাজের জন্য দেশের বাইরে যেতে হয় তখন সরকারের আদেশপত্র বা Government Order

এই ডকুমেন্টসগুলো ব্যতীত সরকারি কর্মকর্তাদের অন্য কোন কাগজপত্রের প্রয়োজন নেই।

প্রি পুলিশ ভেরিফিকেশন

প্রি পুলিশ ভেরিফিকেশন হচ্ছে যাদের ইমারজেন্সি পাসপোর্ট করা প্রয়োজন তাদের জন্য। অতি জরুরি প্রয়োজনে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি নিলে তখন আগেই পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে হয়। আবেদন করার পূর্বেই পুলিশ আপনার তথ্য যাচাই করে একটি ক্লিয়ারেন্স রিপোর্ট দিবে। সুপার একপ্রেস ডেলিভারিতে আপনি ১ সপ্তাহের মধ্যেই পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন।

পুরাতন পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে

MRP passport রিনিউ করতে আপনাকে ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে হবে। আমাদের ওয়েবসাইটে ই পাসপোর্ট আবেদন করার নতুন নিয়ম A to Z দেওয়া আছে সেখান থেকে দেখে নিতে পারেন। 

আপনাকে অনলাইনে epassport.gov.bd এই ওয়েবসাইটে ঢুকে পাসপোর্ট রিনিউ করার আবেদন করতে হবে। উপরে উল্লেখিত সব ডকুমেন্ট এর সাথে আপনার পুরাতন পাসপোর্টটি পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে। আপনাদের সুবিধার্থে নিম্নে পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে তা উল্লেখ করা হলোঃ 

  • পাসপোর্ট রিনিউ করার অনলাইন আবেদন ফর্ম। 
  • আবেদন পত্রের সামারি/ সারাংশ কপি। 
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি। 
  • ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালানের কপি। 
  • পূর্বের পাসপোর্টের মূল কপি এবং ফটোকপি।
  • সরকারি চাকরিজীবী হলে  GO এবং NOC  সনদ। 
  • কোন তথ্য সংশোধন করতে হলে অন্যান্য দরকারি কাগজপত্রের ফটোকপি।

পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করনীয় কি

পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে আপনাকে পাসপোর্ট রি ইস্যু করার জন্য অনলাইনে ই পাসপোর্টের আবেদন করা লাগবে। যেই জায়গায় আপনার পাসপোর্ট হারানো গিয়েছে সেখানে থানায় একটি জিডি ফাইল করতে হবে। এরপর জিডির একটি কপি পাসপোর্টের অন্যান্য ডকুমেন্টের সাথে জমা দিতে হবে।

FAQs

১। পাসপোর্ট রি-ইস্যু করতে কি কি কাগজপত্র লাগে?

উঃ পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে আপনাকে প্রথমে জিডি করতে হবে। যে এলাকাতে আপনার পাসপোর্ট হারানো গিয়েছে সেখানকার নিকটস্থ থানায় গিয়ে জিডি করে সেটির একটি কপি সংগ্রহ করবেন। আর অন্য সব ডকুমেন্টস একই থাকবে।

২। জন্ম নিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট করা যায় কি?

উঃ হ্যাঁ, জন্ম নিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট করা যায়। ১৮ বছরের নিচে যদি কেউ পাসপোর্ট করতে চায় তাহলে তাকে জন্ম নিবন্ধন দিয়েই পাসপোর্ট করতে হবে সাথে বাবা-মায়ের এনআইডি ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে।

আরও পড়ুন

শেয়ার করুন

Leave a Comment