বাচ্চাদের পাসপোর্ট করার নিয়ম

আপনি কি আপনার বাচ্চার জন্য পাসপোর্ট তৈরি করতে চাচ্ছেন? কিন্তু কি কি ডকুমেন্টস লাগবে, কীভাবে আবেদন করতে হবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন কীভাবে বাচ্চাদের জন্য পাসপোর্ট আবেদন করতে হয়, কি কি কাগজপত্র লাগে ইত্যাদি।

২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বাংলাদেশে ই পাসপোর্ট সেবা চালু হয়েছে। সেই সময় থেকে বাংলাদেশে সব বয়সী নাগরিকদের ই পাসপোর্ট এর সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। প্রধানত বিদেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট তৈরি করতে হয়।

পাসপোর্ট আবেদনের নিয়ম মূলত সব বয়সীদের জন্য একই তবে বয়সভেদে কাগজপত্রের কিছুটা পার্থক্য থাকে। এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে আশা করি বুঝতে পারবেন।

বাচ্চাদের পাসপোর্ট আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসঃ

নিম্নে বাচ্চাদের ই পাসপোর্ট করার জন্য যা যা কাগজপত্র লাগবে তা উল্লেখ করা হলোঃ

  • অনলাইনে পূরণকৃত ই পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম কপি
  • শিশুর অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র।
  • ই পাসপোর্ট আবেদনের সামারি/ সারাংশের কপি।
  • পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি। 
  • পাসপোর্ট ফি প্রদানের চালানের কপি/ ব্যাংকের পেমেন্ট স্লিপ। 
  • 3R সাইজের ল্যাব প্রিন্টের ছবি ( সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড)
  • পিতা-মাতার পাসপোর্ট সাইজের ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড)
  • শিশুর টিকা কার্ডের কপি।

বাচ্চাদের পাসপোর্ট করার নিয়ম

প্রথমে পাসপোর্ট করার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://www.epassport.gov.bd/landing  ঢুকে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের জেলা, থানা নির্বাচন করতে হবে, এনআইডি নাম্বার, ইমেইল আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে  অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। তারপর আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, পিতা-মাতার তথ্যসহ অন্যান্য সকল তথ্য পূরণ করতে হবে। পেশার ক্ষেত্রে others (অন্যান্য) নির্বাচন করা যথাযথ।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ছয় বছর বা তার কম বয়সী শিশুদের বায়োমেট্রিক ডকুমেন্ট নেওয়া হয় না। শুধুমাত্র কাগজপত্র জমা দিলেই ডেলিভারি স্লিপ দিয়ে দেওয়া হয়। তবে ৬ বছরের ঊর্ধ্বে যারা তাদের বায়োমেট্রিক নেওয়া হয় তারপর শিডিউল দেওয়া হয়।

ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন

বাচ্চাদের ই পাসপোর্ট করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে বাচ্চাটির অনলাইন জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। বর্তমানে হাতে লেখা বা কম্পিউটারে মুদ্রণ করা জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করা হয় না। আমাদের ওয়েবসাইটে অনলাইনে কীভাবে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হয় তার পুরো নিয়মটি দেওয়া আছে। আপনি যদি নিয়মটি না জেনে থাকেন তাহলে সেখান থেক দেখে নিতে পারেন।

জন্ম সনদটি অনলাইনে নিবন্ধিত কিনা তা জানার জন্য আপনাকে বাংলাদেশের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে https://bdris.gov.bd/  গিয়ে যাচাই করতে হবে। আপনার জন্ম নিবন্ধনে থাকা নিবন্ধন সংখ্যা ও জন্ম তারিখ দিয়ে সার্চ করতে হবে। যদি জন্ম সনদ প্রদর্শিত হয় তাহলে বুঝতে পারবেন আপনার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন আছে আর error দেখালে বুঝবেন আপনার জন্ম সনদটি ডিজিটাল নয়।

পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি

অপ্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক বা ৬ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সী যারা ই পাসপোর্ট করতে চাচ্ছেন তাদেরকে বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি প্রয়োজন হবে। পাসপোর্ট আবেদন ফর্মে প্রদত্ত পিতা-মাতার নামের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের নামের মিল থাকতে হবে। যদি ভোটার আইডি কার্ডের নামের সাথে পাসপোর্টে পিতা-মাতার নামের মিল না থাকে তাহলে সেটা সংশোধন করে নিতে হবে।

অনলাইনে পূরণকৃত পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম এবং সামারি প্রিন্ট

ই পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম এই epassport,gov,bd ওয়েবসাইট থেকে পূরণ করতে হবে। সব তথ্য পূরণ করার পর অর্থাৎ আবেদন সম্পন্ন হলে লাস্ট পেইজে অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম এবং প্রিন্ট সামারি নামে দুইটি অপশন দেখতে পাবেন। তারপর আবেদন ফর্ম এবং সামারি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিবেন।

3R সাইজের ছবি

ছয় বছর বা এর চেয়ে কম বয়সী শিশুদের জন্য পাসপোর্ট অফিসে ছবি তোলা কিছুটা ঝামেলার। সেজন্য বাচ্চাদের 3R সাইজের ল্যাব প্রিন্টের ধূসর ব্যাক গ্রাউন্ডের ছবি আবেদন ফর্মের সাথে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে। আর শিশুর বয়স ছয় বছরের বেশি হলে 3R সাইজের ছবির দরকার নেই।

পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালানের কপি

ই পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান কপি বাংলাদেশ সরকার প্রাপ্তি বাতায়ন ই চালান ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করতে হবে। আপনি ঘরে বসে ই পাসপোর্ট ফি জমা দিয়ে সেটির চালানের কপি পাসপোর্টের অন্যান্য ডকুমেন্টের সাথে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিবেন।

ব্যাংক এশিয়া, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালানের কপি নিয়ে থাকে। চালান নেওয়ার পর ব্যাংক থেকে চালানের গ্রাহক কপিসহ সাথে একটি জমা রশিদ দেওয়া হবে।

ই পাসপোর্ট আবেদন ফি

পাসপোর্ট আবেদন ফি সব বয়সের নাগরিকদের  জন্য একই। পাসপোর্ট ৪৮ পেইজ এর ৫/১০ বছর মেয়াদি এবং ৬৪ পেইজের ৫/১০ বছর মেয়াদের হয়ে থাকে।

নিম্নের ছকে বছর এবং পেইজ সংখ্যার ভিত্তিতে পাসপোর্টের মূল্য উল্লেখ করা হলোঃ

বছরপেইজ সংখ্যামূল্য (টাকা)

৪৮৪০২৫/=
৬৪৬৩২৫/=

১০
৪৮৫৭৫০/=
৬৪৮০৫০ /=

শিশুদের ই পাসপোর্ট পেতে কত দিন লাগে

পাসপোর্ট অফিসে সব ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার পর পাসপোর্ট পেতে সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। পাসপোর্ট ডেলিভারির ধরনের উপর ভিত্তি করে আপনার পাসপোর্ট হাতে পেতে কতদিন সময় লাগবে। যেমনঃ এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে ১০ কার্যদিবস, সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে ৩/৪ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যাবে। তবে সুপার একপ্রেস ডেলিভারি পেতে হলে আপনাকে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে।

সবশেষে বলা যায় যে অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ থাকায় এখন পাসপোর্ট আবেদন করা অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছে। আবেদনের জন্য কাগজপত্র সত্যায়িত করার প্রয়োজন পড়ে না। আর একাডেমিক কোন সার্টিফিকেট প্রাপ্তির পূর্বেই ই পাসপোর্ট করার সুযোগ পাওয়ায় তাদের ভবিষ্যতে পাসপোর্ট বা ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে কোন সমস্যায় পড়তে হবে না। আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করে পাশে থাকবেন।

আরও পড়ুন

শেয়ার করুন

Leave a Comment