রোমানিয়া কাজের ভিসা

রোমানিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি উন্নয়নশীল দেশ। সাম্প্রতিক সময়ে রোমানিয়াকে সেনজেনভুক্ত দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেশটি অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বচ্ছল এবং বেকারত্বের হার তুলনামূলক কম। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার মানুষ কাজের জন্য রোমানিয়া যাওয়ার জন্য চেষ্টা করে।

তবে রোমানিয়া যাওয়ার পূর্বে সেখানে কোন কোন কাজের চাহিদা বেশি, কোন কাজের বেতন কেমন এই বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন। আপনি যদি কোন কাজে দক্ষতা অর্জন করে যেতে পারেন তাহলে আপনার কাজ খুঁজে পেতে কোন সমস্যা হবে না। নিজের থাকা খাওয়ার খরচ বাদে মাসে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা অনায়াসে ইনকাম করতে পারবেন।

আপনারা অনেকেই জানতে ইচ্ছুক যে রোমানিয়াতে গেলে কোন কাজ করে বেশি টাকা ইনকাম করা যাবে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের রোমানিয়ায় কোন কাজের বেতন কত, কোন কোন কাজের কর্মক্ষেত্র বেশি ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত জানাবো। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী শ্রমিকদের অনেক বড় অবদান রয়েছে।

রোমানিয়াতে কোন কাজের চাহিদা বেশি

রোমানিয়াতে নানা ধরনের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আপনি যে কাজটি ভালো পারেন, মোটামুটি অভিজ্ঞতা আছে এমন একটি কাজ বাছাই করবেন এবং সেই কাজে দক্ষ হবেন। ইউরোপের অন্য দেশগুলোর চাইতে রোমানিয়াতে কাজ পাওয়া সহজ, এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধাও বেশি। রোমানিয়াতে সব ধরনের কাজেরই ভালো চাহিদা রয়েছে। 

তবে জায়গা অনুসারে কর্মক্ষেত্রের চাহিদা কম বেশি হয়। রোমানিয়াতে যে সকল কাজের চাহিদা বেশি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ 

  • কন্সট্রাকশন
  • টেকনিশিয়ান
  • ইঞ্জিনিয়ার
  • হোটেল ম্যানেজার
  • ড্রাইভার
  • টাইলস মিস্ত্রি
  • ডেলিভারি বয়
  • শেফ
  • ডিজাইনার
  • ডিশ ওয়াশার

উপরে উল্লেখিত কাজগুলোর ব্যাপক ডিমান্ড রয়েছে রোমানিয়াতে । তাই রোমানিয়া যাওয়ার পূর্বে উপরের যেকোন একটি কাজে দক্ষতা অর্জন করে গেলে আপনি মাসে ভালো টাকা ইনকাম করতে পারবেন। যার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা যত বেশি তার ইনকাম তত বেশি হবে।

রোমানিয়ায় কাজের বেতন কেমন

উন্নত ও স্বচ্ছল জীবনযাপনের জন্য প্রতিবছর অনেক মানুষ রোমানিয়াতে কাজের জন্য পাড়ি জমান। রোমানিয়াতে উচ্চ বেতন, কর্মসংস্থানের ভালো সুযোগ রয়েছে দেখে প্রতিনিয়ত রোমানিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে রোমানিয়াতে মাসিক বেতন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বা এর বেশিও হয়ে থাকে। 
আপনি কোন কাজের ভিসা নিয়ে রোমানিয়া যাচ্ছেন, সেই কাজে আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কেমন এসব বিষয়ের উপর নির্ভর করে বেতন কম-বেশি হতে পারে। তাই রোমানিয়া যাওয়ার আগে কোন কাজের বেতন কত তা জেনে নিলে আপনার জন্য কাজ নির্বাচন করা সুবিধাজনক হবে। নিম্নে  রোমানিয়ায় বিভিন্ন পেশার বেতনের তালিকা উল্লেখ করা হলোঃ

পেশাবেতন
মোবাইল ম্যাকানিক৭০ হাজার থেকে ১ লাখ 
ইলেক্ট্রিশিয়ান ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ
হোটেল ম্যানেজার৫০ হাজার থেকে ১ লাখ
কন্সট্রাকশন৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার
ক্লিনার৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার
ড্রাইভার ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ
ফুড ডেলিভারি বয়৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার
ফুড প্যাকেজিং৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার
টাইলস মিস্ত্রী৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার
শেফ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ
ডিজাইনার৫০ হাজার থেকে ৯০ হাজার 
ডিশ ওয়াশার৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার

এছাড়া আপনি যদি সরকারি কোন চাকরি করার সুযোগ পান সেক্ষেত্রে বেতন আরও বেশি হতে পারে। তবে যেই কাজের জন্যই যান না কেন আপনাকে অনেক দক্ষ এবং পারদর্শী হতে হবে।

রোমানিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কি?

কোন দেশে কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য যে ভিসা আবেদন করা হয় সেটি হচ্ছে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অনেক মানুষ কাজের জন্য রোমানিয়ার ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদন করে থাকে। রোমানিয়া অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এবং কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ থাকার কারণে মানুষ রোমানিয়া কাজের জন্য যেতে আগ্রহী। 

রোমানিয়া সরকার এখন সরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে যার কারণে ভিসা পাওয়া তুলনামূলক কঠিন। আপনি যদি কোন কোম্পানিতে জব করার জন্য যেতে চান বা শ্রমিক হিসেবে কাজের জন্য যেতে চান তাহলে আপনাকে কাজের ভিসার আবেদন করতে হবে। 

তবে রোমানিয়ার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া এখন বেশ কঠিন হয়ে গিয়েছে। কয়েক বছর আগে রোমানিয়ার ভিসা পেতে সময় লাগতে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ আর এখন ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে অনেকের ভিসা অনুমোদন বাতিলও হয়ে যায়।

ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করতে কি কি ডকুমেন্টস লাগবে?

ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী ডকুমেন্টের ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য থাকে। আপনি কোন ভিসায় যাবেন সে ভিসার জন্য কি কি কাগজপত্র জমা দিতে হবে তা আগে থেকে ভালোমত জেনে নিবেন। তবে কিছু ডকুমেন্টস আপনি যেই ভিসাতেই যান না কেন আপনাকে জমা দিতে হবে। নিচে রোমানিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদনের জন্য যা যা কাগজপত্র লাগবে তা উল্লেখ করা হলোঃ

  • একটি বৈধ পাসপোর্ট ( পাসপোর্টের মেয়াদ নূন্যতম ১৮ মাস থাকতে হবে)
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটকপি 
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
  • পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফর্ম
  • টিটিসি কর্তৃক কাজের দক্ষতা সার্টিফিকেট 
  • ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট ( IELTS, TOEFL)
  • রোমানিয়ান ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট
  • আপনার সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি
  • মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
  • আপনার আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণস্বরূপ ব্যাংক স্ট্যাট্মেন্ট এর কপি লাগবে
  • অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়ক কাগজপত্র

রোমানিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসার নতুন নিয়ম

ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেলে আপনি রোমানিয়াতে যেকোন ধরনের কাজ বৈধভাবে করতে পারবেন। উন্নত জীবনযাপন, কর্মসংস্থান, ভালো বেতন লাভের আশায় অনেক মানুষ রোমানিয়াতে যেতে ইচ্ছুক। রোমানিয়া এখন একটি সেনজেনভুক্ত দেশ। সেনজেনভুক্ত হওয়ায় কারণে আগের চেয়ে ভিসা অনুমোদন পাওয়া কিছুটা কমে গেছে।।

রোমানিয়া সরকার ২০২৩ সালে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নতুন নিয়ম সংযোজন করেছেন। নিম্নে নতুন নিয়মগুলো উল্লেখ করা হলোঃ

  1. ওয়ার্ক পারমিট ভিসাতে রোমানিয়া যেতে হলে আপনি যেই কোম্পানিতে চাকরির জন্য যাচ্ছেন সেই কোম্পানির অফার লেটার জমা দিতে হবে।
  2. কোম্পানি কর্তৃক আপনার মাসিক বেতন সর্বনিম্ন ২৫০০ ইউরো হতে হবে।
  3. রোমানিয়া ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট থাকতে হবে।

রোমানিয়া ভিসা প্রসেসিং এজেন্সি

বিদেশ গন্তব্যে আমাদের দেশের নাগরিকদের একটা বিশাল অংশ এজেন্সিগুলোর উপর নির্ভরশীল। সাধারণত যারা ওয়ার্কিং ভিসায় বিদেশে যায় তাদের বেশিরভাগই পড়ালেখায় অত দক্ষ নয়। তাই তাদের এজেন্সির সহায়তা নিতে হয়।

কিন্তু আসল সমস্যাটি হলো, আমাদের দেশে অনেক ভুয়া এজেন্সি রয়েছে যারা মানুষের কাছ থেকে ভিসা দেওয়ার নামে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে। সেজন্য ভিসা এজেন্সি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আপনাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিম্নের বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে ভিসা এজেন্সি নির্বাচন করবেনঃ

  • প্রথমে এজেন্সির লাইসেন্স আছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
  • এজেন্সির অভিজ্ঞতা কত বছরের, যারা এই এজেন্সির সহায়তা নিয়েছে তারা যথাযথভাবে ভিসা পেয়েছে কিনা তা খোঁজ করতে হবে।
  • এজেন্সি ফি সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
  • এজেন্সির সাথে চুক্তি করার পূর্বে তাদের সাথে কথা বলে সব বিষয় ক্লিয়ার করে নিবেন।
  • আপনার ব্যক্তিগত তথ্যগুলো জেনেবুঝে শেয়ার করবেন।

বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে একটি ভালো এজেন্সির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিসা আবেদন করা, বিশ্বস্ত কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ তৈরি করা, যাতায়াতের ব্যবস্থা এ সমস্ত কাজে একটি এজেন্সি সহায়তা করে থাকে।

রোমানিয়া ভিসা সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর

১। রোমানিয়া ভিসা কি বন্ধ?

উঃ না, রোমানিয়া ভিসা বর্তমানে চালু রয়েছে। কিন্তু ২০২৩ সালে রোমানিয়া সরকার ওয়ার্ক পারমিট ভিসার নিয়মনীতিতে কিছুটা পরিবর্তন করেছে। যেমনঃ এখন রোমানিয়া যেতে হলে আপনাকে রোমানিয়ান ভাষা শিখে তারপর ভিসা আবেদন করতে হবে নতুবা আপনি ভিসা অনুমোদন পাবেন না। তবে ভিসা আবেদন বন্ধ নেই আপনি যেকোন সময় ভিসা আবেদন করতে পারবেন।

২।  বাংলাদেশে কি রোমানিয়া অ্যাম্বাসি আছে?

উঃ না, বাংলাদেশে রোমানিয়ার কোন অ্যাম্বাসি নেই। রোমানিয়া যেতে হলে ভিসা আবেদন করার জন্য ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত রোমানিয়া দূতাবাসে যেতে হবে। ভিসা পাওয়ার সকল কার্যক্রম সেখানে গিয়ে সম্পন্ন করতে হবে।

৩। রোমানিয়াতে সর্বনিম্ন বেতন কত?

উঃ রোমানিয়াতে সর্বনিম্ন বেতন ৪০ হাজার টাকা থেকে শুরু। এরপর আপনার কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার উপর ভিত্তি করে বেতন বাড়বে।

আরও পড়ুন

শেয়ার করুন

Leave a Comment