পাসপোর্ট কিভাবে রিনিউ করতে হয়

আপনার পাসপোর্ট এর মেয়াদ কি উত্তীর্ণ হওয়ার পথে? কীভাবে পাসপোর্ট রিনিউ করবেন সেই বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের পোস্টটি আপনারই জন্য। এই পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন পাসপোর্ট রিনিউ করার পদ্ধতি, পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি ডকুমেন্টস লাগে ইত্যাদি বিষয়।

পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বেই পাসপোর্ট রিনিউ করে ফেলা উচিত। কারণ পাসপোর্টের ডেট শেষ হয়ে গেলে সেই পাসপোর্ট আপনি আর ইউজ করতে পারবেন না। দেশে বা বিদেশে যেখানেই আপনি অবস্থান করেন আপনাকে পাসপোর্ট রিনিউ করাতে হবে।

ই পাসপোর্ট করার সুবিধা হচ্ছে আপনাকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজন নেই। ঘরে বসেই অনলাইন থেকে আপনি পাসপোর্ট রিনিউ এর আবেদন করতে পারবেন। আপনি যদি বিদেশে অবস্থান করে থাকেন তাহলে ওই দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে পাসপোর্ট রিনিউ করাতে পারবেন।

ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম

বর্তমানে আপনি ঘরে বসেই অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার আবেদন করতে পারবেন। এখন ই পাসপোর্ট সেবা কার্যক্রম পুরো দেশেই চলমান রয়েছে। তাই আপনি যেই জেলায় অবস্থান করে থাকুন, আপনি আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।

পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য প্রথমে আপনাকে epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। তারপর নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন ফর্মে আপনার MRP ( machine readable passport ) রয়েছে এবং এটির সময় শেষ ( Expired ) নির্বাচন করতে হবে। অন্যান্য সব তথ্য নতুন পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে।

আবেদন ফর্মে প্রদানকৃত সকল তথ্যের সাথে যেন আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের মিল থাকে সেটি খেয়াল রাখবেন। আর পাসপোর্ট রিনিউ করার আবেদন করার সময় আপনাকে পূর্বের পাসপোর্ট নাম্বার প্রদান করতে হবে। পাসপোর্ট নাম্বার ইনপুট করার পর আপনার সব ইনফরমেশন তৎক্ষণাৎ চলে আসবে।

এছাড়া পুরাতন পাসপোর্টের কোন তথ্য সংশোধন করতে হলে আপনি পাসপোর্ট রিনিউ এর আবেদন করার সময় তা ঠিক করে নিতে পারেন।

পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে

MRP passport রিনিউ করতে হলে আপনাকে ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে হবে।

আপনাদের সুবিধার্থে নিম্নে পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে তা উল্লেখ করা হলোঃ

  • পূর্বের পাসপোর্টের মূল কপি এবং ফটোকপি।
  • পাসপোর্ট রিনিউ করার অনলাইন আবেদন ফর্ম। 
  • আবেদন পত্রের সামারি/ সারাংশ কপি। 
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি। 
  • ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালানের কপি। 
  • সরকারি চাকরিজীবী হলে  GO এবং NOC  সনদ। 
  • কোন তথ্য সংশোধন করার প্রয়োজন হলে অন্যান্য দরকারি কাগজপত্রের ফটোকপি।

আপনাকে অনলাইনে epassport.gov.bd এই ওয়েবসাইটে ঢুকে পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য আবেদন করতে হবে। এরপর আপনি প্রথমবার যেই পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট তৈরি করেছেন সেখান থেকেই পাসপোর্ট রিনিউ করাতে হবে। আর যদি বিদেশে থাকেন তাহলে ওই দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে রিনিউ করতে হবে।

অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ আবেদন করার নিয়ম

ই পাসপোর্ট নবায়ন করার নিয়ম আর নতুন পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম একই। প্রথমে আপনাকে মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে যেকোন একটি ব্রাউজারে গিয়ে সার্চবারে epassport.gov.bd লিখে সার্চ করতে হবে। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে  আপনাকে পর্যায়ক্রমে কতগুলো তথ্য পূরণ করতে হবে।

নিম্নের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনার পাসপোর্ট রিনিউ আবেদন সম্পন্ন করুন।

ধাপ-১ঃ

ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর আপনাকে Apply Online for e-passport/Re-issue অপশনে ক্লিক করতে হবে। প্রথমে পাসপোর্টের ধরনের, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানা দিতে হবে। এরপর ID Documents অপশনে আপনাকে পাসপোর্ট করার কারণ এবং পূর্বে কোন ধরনের পাসপোর্ট ছিল নাকি পাসপোর্ট ছিল না তা নির্বাচন করতে হবে।

ধাপ-২ঃ

পাসপোর্ট রিনিউ

ID Documents অপশন থেকে Yes, I have a Machine Readable Passport (MRP) সিলেক্ট করবেন। এরপর What is the reason for your passport request? এই প্রশ্নের নিচের বক্সে ডানদিকের তীর চিহ্নে ক্লিক করে Expired অপশন নির্বাচন করবেন অথবা যে কারণে আপনি পাসপোর্ট রিনিউ করতে চাচ্ছেন সেটি সিলেক্ট করবেন। নিম্নে প্রদত্ত কারণগুলো থেকে একটি কারণ নির্বাচন করবেন। যথাঃ

  • Conversion to Epassport- MRP থেকে ই পাসপোর্টে রপান্তরিত করা
  • Expired- মেয়াদ উত্তীর্ণের জন্য
  • Lost/ stolen- হারিয়ে/ চুরি হয়ে গিয়েছে 
  • Data change- তথ্য পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে
  • Unusable- নষ্ট বা ব্যবহার অযোগ্য
  • Other- অন্যান্য

ধাপ-৩ঃ

আপনার পাসপোর্ট নাম্বার ইনপুট করতে হবে। এরপর আপনার পাসপোর্ট ইস্যু ও মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ প্রদান করতে হবে। 

পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে আপনার পিতা-মাতা, স্বামী/ স্ত্রী এবং জরুরি যোগাযোগের তথ্য পূরণ। তারপর পাসপোর্টের পেইজ সংখ্যা, ডেলিভারির ধরণ নির্বাচন এবং পাসপোর্ট ফি প্রদান করতে হবে। তাছাড়া আমাদের পেইজে পাসপোর্ট করার নিয়ম A to Z দেওয়া আছে আপনি প্রয়োজনে সেখান থেকে দেখে নিতে পারেন।

এভাবে উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে আপনি আপনার পাসপোর্ট রিনিউ করে নিতে পারবেন। আপনি দেশে-বিদেশে যেকোন জায়গা থেকে পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করতে পারবেন।

পাসপোর্ট রিনিউ ফর্ম জমা দেওয়ার নির্দেশনা

পাসপোর্ট রিনিউ করার আগে আপনাকে কিছু বিষয় জানতে হবে যে সেগুলো হলোঃ

  • অনলাইনে ই পাসপোর্ট  রিনিউ আবেদন করে সেটি প্রিন্ট করতে হবে।
  • আপনার পূর্বের পাসপোর্টের মূল কপি জমা দিতে হবে।
  • পাসপোর্ট রিনিউ ফি পরিশোধ করতে হবে।
  • পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে আপনাকে থানায় জিডি করতে হবে । তারপর সেই জিডির কপি অন্যান্য তথ্যের সাথে যুক্ত করতে হবে।

প্রবাসীদের পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম

বিদেশে থাকাকালীন সময়ে যদি আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে আপনাকে বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে passport রিনিউ আবেদন করতে হবে। সাথে অবশ্যই আপনাকে পূর্বের পাসপোর্ট নিয়ে যেতে হবে এবং আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন অনলাইন থেকে প্রিন্ট করে নিবেন। 

আপনি চাইলে একই সাথে কোন তথ্য সংশোধন করে নিতে পারবেন। তথ্য সংশোধন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র জমা দিতে হবে, কি কি কাগজপত্র জমা দিতে হব সেটি আপনাকে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিবে। আরেকটি বিষয় হলো, বিদেশে আপনার পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী রেসিডেন্সিয়াল কার্ড দেওয়া হয় তাই পাসপোর্টের কোন তথ্য সংশোধন করলে আপনাকে রেসিডেন্সিয়াল কার্ডটিও ঠিক করে নিতে হবে।

আবেদন করার সময় একটি অপশন দেখতে পাবেন “Are you applying from Bangladesh?” তখন No অপশন নির্বাচন করে আপনি যেই দেশ থেকে আবেদন করছেন সেটি সিলেক্ট করবেন। আর ফি প্রদান করার ক্ষেত্রে আপনাকে টাকা মানি অর্ডার বা অফিসিয়াল চেক প্রদান করতে হবে।

পাসপোর্ট রিনিউ করতে কত টাকা লাগে

নতুন পাসপোর্ট আবেদন করতে যত টাকা লাগে পাসপোর্ট রিনিউ করার ক্ষেত্রেও ঠিক তত টাকাই লাগে। সাধারণত পাসপোর্ট ৪৮ পেইজ এর ৫/১০ বছর মেয়াদি এবং ৬৪ পেইজের ৫/১০ বছর মেয়াদের হয়ে থাকে।

নিম্নের ছকে বছর এবং পেইজ সংখ্যার ভিত্তিতে পাসপোর্টের মূল্য উল্লেখ করা হলোঃ

বছরপেইজ সংখ্যামূল্য

৪৮৪০২৫/=
৬৪৬৩২৫/=

১০
৪৮৫৭৫০/=
৬৪৮০৫০ /=

পাসপোর্ট রিনিউ করতে কত সময় লাগে

নতুন পাসপোর্ট আবেদন  প্রসেসিং হতে যতদিন সময় লাগে সাধারণত পাসপোর্ট রিনিউ করার ক্ষেত্রে তত সময় লাগে না। সর্বোচ্চ ২-৩ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে পাসপোর্ট নবায়ন করার জন্য। যেমনঃ পাসপোর্ট রিনিউ করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন এর দরকার হয় না (ক্ষেত্র বিশেষ প্রয়োজন হতে পারে) তবে নতুন পাসপোর্ট আবেদনের সময় পুলিশ ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক। আবার পাসপোর্ট ডেলিভারির ধরনের (রেগুলার/ একপ্রেস/ সুপার এক্সপ্রেস) উপর নির্ভর করবে আপনার পাসপোর্ট হাতে পেতে কত সময় লাগবে।

পাসপোর্ট রিনিউ করার সময় মানুষ যে ভুলগুলো করে

পাসপোর্ট আবেদনের সময় মানুষের কিছু ভুলত্রুটির জন্য পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব হয় আবার পাসপোর্ট আবেদন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। যেমনঃ

  • ভুল তথ্য প্রদান করলে অর্থাৎ আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সাথে আবেদন ফর্মে প্রদান করা তথ্যের গরমিল থাকলে।
  • প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস না থাকার জন্য।
  • দ্রুত পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য দালালের কাছে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করার জন্য।
  • আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে।

উপরে উল্লেখিত কারণসমূহের জন্য পাসপোর্ট পেতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই বুঝে শুনে সাবধানতা অবলম্বন করে আবেদন করবেন।

আরও পড়ুন

শেয়ার করুন

Leave a Comment