প্রাত্যহিক জীবনে আমরা মাঝেমধ্যে এমন কিছু সমস্যার সম্মুখীন যেখানে আইনি সহায়তার প্রয়োজন পরে। যেমনঃ কারো কোন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ( এনআইডি কার্ড, পাসপোর্ট, দলিল ইত্যাদি) হারিয়ে গেলে, কোন কিছু চুরি হলে, কোন টাকা পয়সা সম্পর্কিত ঝামেলায় পড়লে আমরা থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করে থাকি।
তবে আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ আইন সম্পর্কে ভালোমত জানেন না। যার কারণে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই তারা জিডি কি, কীভাবে করতে হয় এই বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত নয়। সেজন্য আজকের আর্টিকেলে আমি জিডি লেখার নিয়ম, কেন জিডি লিখবেন, কোন কোন বিষয়ে জিডি করতে হয় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
জিডি কি এবং কেন জিডি করবেন?
জেনারেল ডায়েরি (General Diary) বা সাধারণ ডায়েরির সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে জিডি। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৪ ও ১৫৫ ধারা অনুযায়ী পুলিশ জিডি গ্রহণ করে এবং পরবর্তিতে আদালতের অনুমতি নিয়ে তদন্ত করে থাকে।
জিডি লিখিত কিংবা মৌখিক দুইভাবেই করা যায়। কিন্তু জিডি লিখিতভাবে করাই ভালো। আপনি আপনার নিকটস্থ কোন থানায় যেয়ে জিডি করতে পারেন। ঢাকার কয়েকটি থানায় অনলাইন জিডি সিস্টেম চালু করা হয়েছে।
মূলত আপনি কোন প্রতারণা, চুরি বা হুমকির শিকার হলে, কেউ নিখোঁজ হলে যথাযথ কারণ উল্লেখ করে আপনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করে রাখতে পারেন। এছাড়া প্রয়োজনীয় কোন ডকুমেন্টস হারিয়ে বা চুরি হয়ে গেলে জিডি করতে পারবেন। যেমনঃ ব্যাংকের চেক, দলিল, সনদ, মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালঙ্কার ইত্যাদি। জিডি হলো কোন অপরাধ বা দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা পুলিশকে আগে থেকে জানিয়ে রাখা যাতে থানা উক্ত ঘটনা সম্পর্কে অবগত থাকতে পারে।
জিডি কীভাবে লিখতে হয়?
জিডি লেখার জন্য কিছু নিয়ম আছে। লেখার নিয়ম কিছুটা আবেদনপত্র লেখার নিয়মের মতই। প্রথমে আপনাকে সেই নিয়মগুলো জানতে হবে এরপর সাধারণ ডায়েরি করতে হবে। নিম্নে সাধারণ ডায়েরি করার নিয়মগুলো বর্ণনা করা হলোঃ
- প্রথমে আপনাকে জিডি করার তারিখ দিতে হবে।
- বরাবর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( যেহেতু আবেদনটি থানার দায়িত্বে যিনি আছেন তার কাছে জমা দিতে হবে তাই)
- এরপর বিষয় উল্লেখ করতে হবে। যেমনঃ জিডি করার জন্য আবেদন ।
- কোন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সেই বিষয়ে উপযুক্ত কারণ উল্লেখ করতে হবে।
- যদি কেউ কোন হুমকি দিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে হুমকি দেওয়ার স্থান, তারিখ, সময়, কোন সাক্ষী থাকলে তার পরিচয় উল্লেখ করতে হবে।
- যিনি হুমকি দিয়েছে আপনি যদি তার পরিচয় জেনে থাকেন সেক্ষেত্রে তার নাম, পিতার নাম, পরিচয় উল্লেখ করতে হবে।
- অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধরার জন্য তাকে চিহ্নিত বা শনাক্ত করার বর্ণনা দিতে হবে।ও
- আপনার ডায়েরি লিখিতভাবে জমা নিয়ে সেটির সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য আবেদন করতে হবে।
- সবশেষে যিনি সাধারণ ডায়েরি করবেন তার নাম, পরিচয় , স্বাক্ষর দিতে হবে।
জিডি বা সাধারণ ডায়েরি করার সময় উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন। আর যেকোন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যাক্তি থানায় গিয়ে জিডি করতে পারবে।
জিডির নমুনা কপি
তারিখঃ ৮/১১/২০২৪ খ্রিঃ
বরাবর
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
‘ক’ থানা
থানার ঠিকানা…
বিষয়ঃ সাধারণ ডায়েরি করার জন্য আবেদন
মহোদয়,
যথাবিহীত সম্মানপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমি ফারহান রহমান, আমার পিতা মোঃ আব্দুর রহমান। গত ৫ তারিখ বাড্ডা এলাকায় একটি কাজের জন্য আমি আর আমার বাবা যাই। সেখান থেকে ফেরার পথে একদল কিশোর আমাদের ছিনতাই করে টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন নিয়ে যায়।
মোবাইলে আমাদের সিম কার্ড এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি রয়েছে যার কারণে ফোনটি পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন। নিচে মোবাইলের মডেল এর ডিটেইলস সংযুক্ত করা হলো।
অতএব, জনাবের নিকট আকুল আবেদন এই যে, মোবাইল ফোনটি খুঁজে পেতে সাধারণ ডায়েরি লিপিবদ্ধ করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।
নিবেদক
ফারহান রহমান
মোবাইল নংঃ xxxxxxxxxxx
অনলাইনে জিডি করতে যা যা লাগবে
অনলাইনে জিডি করার জন্য আপনার কিছু তথ্য লাগবে। সেগুলো হলোঃ
- আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের
- একটি সচল মোবাইল নাম্বার
- ইমেইল এড্রেস
অনলাইনে জিডি করার নিয়ম
বর্তমানে অনেক থানায় অনলাইনে জিডি করা যায়। আপনি ঘরে বসে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজের মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে জেনারেল ডায়েরি করতে পারবেন।
অনলাইনে জিডি করার সম্পূর্ণ নিয়ম জানতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুনঃ
ধাপ-১ঃ মোবাইলে Online GD App ডাউনলোড
সর্বপ্রথম আপনাকে আপনার মোবাইলের গুগল প্লে স্টোর থেকে Online GD App টি ডাউনলোড করতে হবে।
ধাপ-২ঃ একাউন্ট তৈরি
আপনার যদি পূর্বে কোন একাউন্ট খোলা না থাকে তাহলে নিবন্ধন অপশনে ক্লিক করুন। এখন আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার এবং জন্ম তারিখ সিলেক্ট করুন। আপনার প্রদান করা তথ্য ঠিক থাকলে আপনি আপনার ভোটার আইডির সব তথ্য দেখতে পাবেন।
এবার আপনার ফেইস ভেরিফিকেশনের জন্য একটি সেলফি তুলতে হবে। অনেক সময় চেহারার পরিবর্তন হলে ফেইস ভেরিফিকেশনে একটু টাইম লাগতে পারে। আপনার ভেরিফাইড সিম নাম্বার দিতে হবে এবং একটি পাসওয়ার্ড দিতে হবে। তাহলেই আপনার একাউন্ট নিবন্ধন সম্পন্ন হয়ে যাবে।
ধাপ-৩ঃ লগইন করা
লগইন করার জন্য আপনাকে আপনার মোবাইল নাম্বার ( যেটি একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করার সময় দিয়েছেন) এবং পাসওয়ার্ড দিতে হবে। লগইন হয়ে গেলে আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা ( জেলা, গ্রাম, ইউনিয়ন ইত্যাদি) দেখতে পাবেন। পরবর্তী ধাপে আপনার NID number, Date of Birth, মোবাইল নাম্বার দেখাবে।
পরবর্তীতে মোবাইল স্ক্রিনে আপনার স্বাক্ষর লিখতে হবে। শেষে আপনার মোবাইল নাম্বার, মোবাইল অপারেটর (রবি, বাংলালিংক, গ্রামীনফোন, টেলিটক) ইমেইল অ্যাড্রেস দিয়ে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করতে হবে। অতঃপর আপনার ফোনে একটি OTP code আসবে। সেই ভেরিফিকেশন কোডটি টাইপ করুন। তাহলেই আপনার রেজিস্ট্রেশনের সব কার্যক্রম শেষ হবে।
ধাপ-৪ঃ হারানো বস্তুর ডিটেইলস প্রদান
প্রথমে হারানো অপশন নির্বাচন করতে হবে। এরপর ধরুন আপনার মোবাইল হারানো বা চুরি হয়ে গিয়েছে তাহলে মোবাইল অপশনে ক্লিক করবেন। অতপর আপনার মোবাইল এর ডিটেইলস ( যেমনঃ কোন ব্র্যান্ড, ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার, অপারেটিং সিস্টেম ইত্যাদি) উল্লেখ করতে হবে।
আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন, অনলাইনে কেবল হারানো জিনিসের জন্য জিডি করা যায় অন্যান্য যেকোন ক্ষেত্রে সরাসরি থানায় যেয়ে অভিযোগ জানাতে হবে।
FAQs
১। থানায় জিডি করতে কি কি কাগজপত্র লাগে?
উঃ জিডি করার জন্য আপনাকে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি কার্ড, নাম, ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য জমা দিতে হতে পারে। একটি সাদা খামে আপনার নাম, ঠিকানা এবং অভিযোগ লিখে থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে জমা দিলেই হবে।
২। জিডি করতে কত টাকা খরচ হয় ?
উঃ থানায় জিডি বা সাধারণ ডায়েরি করতে কোন টাকা পয়সার প্রয়োজন হয় না। জিডি করা একজন নাগরিকের আইনগত অধিকার, এক্ষেত্রে থানা অফিসার যদি কোন ধরনের ঘুষ চায় সেটি আপনি অফিসার ইন চার্জ বা সার্কেল অফিসারকে জানাবেন।
৩। কত দিনের মধ্যে জিডি করতে হয়?
উঃ জিডি করার কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। জিডি আদালতের অনুমতি নিয়ে তদন্ত করতে হয়। এরপর আদালত তদন্তকারীকে একটি নির্দিষ্ট সময় যেমনঃ ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে বলেন। যথা সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ না হলে আপনি পুনরায় সময় চেয়ে আদালতে আবেদন করতে পারবেন।
৪। কোথায় জিডি করতে হবে?
উঃ আপনি আপনার এলাকার নিকটস্থ থানায় জিডি করবেন। তা নাহলে পড়ে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়।