পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের জন্য আবেদন করার নিয়ম

আপনি কি বাড়িতে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য নতুন বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন করতে চান? তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনারই জন্য। বর্তমানে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অনলাইনে নতুন বিদ্যুৎ মিটারের জন্য আবেদন করার সিস্টেম চালু করেছেন। তবে অনলাইনে কিভাবে নতুন মিটারের জন্য আবেদন করতে হয়  তা অনেকেই জানেন না। 

তাই আজকের আর্টিকেলে আমি পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের জন্য কিভাবে আবেদন করতে হয় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনি নিজে নিজেই অনলাইনে বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন করতে সক্ষম হবেন।

পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদনের নিয়মাবলী

বিদ্যুৎ মিটারের জন্য আবেদন করার পূর্বে আবেদনের কিছু নিয়মাবলী আছে সেইগুলো ভালোমত জানতে হবে। নিয়ম না জেনে আবেদন করলে ভুলত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর এসব সরকারি কাজের ক্ষেত্রে সামান্য ভুল হলেও সেটার জন্য পরবর্তিতে অনেক ভেজালের সম্মুখীন হতে হয়। তাই আবেদন করার আগে নিয়মগুলো ভালোমত পড়ে নিবেন।

পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন করার শর্তসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি সংযুক্ত করতে হবে ( এনআইডি এর সাইজ ৬০০x৪৭৫ এবং ৩০০ কিলোবাইট,  ছবির সাইজ ৩০০x৩০০ এবং ১৫০ কিলোবাইট হতে হবে )।
  •  জমির মালিকানা প্রমানের জন্য জমির খারিজ/দলিলের স্ক্যান কপি সংযুক্ত করতে হবে ।
  • সার্ভিস ড্রপের অর্থাৎ সংযোগস্থল হতে সার্ভিস পোলের/ খাম্বার দুরত্ব ১৩০ ফুটের মধ্যে হতে হবে।
  • সার্ভিস ড্রপের দুরত্ব ঠিকভাবে মেপে তথ্য পূরণ করতে হবে । দুরত্ব পরিমাপে গরমিল হলে পরবর্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে বিলম্ব হতে পারে।
  • আবেদনের সাত (৭) দিনের মধ্যে হাউজ ওয়্যারিং এবং সোলার ইউনিট স্থাপনঃ তা অনলাইন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। নাহলে আবেদনটি অসম্পূর্ন বলে বিবেচনা করা হবে। 
  • চাহিদাকৃত লোড ৮০ কিলোওয়াটের বেশি হলে HT সংযোগের নিয়মাবলী প্রযোজ্য হবে।
  • অনলাইনে সার্ভে করার পর ( আবেদন ফি, মেম্বার ফি এবং নিরাপত্তা জামানত ) প্রয়োজনীয় অর্থ জমাদানসহ সকল নির্দেশনা পরে এসএমএস এর মাধ্যমে জানানো হবে।
  • আবেদন ফর্মে লাল চিহ্নিত (*) বক্সগুলো অবশ্যই পূরন করতে হবে।
  • আবেদনপত্রে গ্রাহকের নিজস্ব ফোন নাম্বার প্রদান করতে হবে।
  • আবেদনের পর প্রাপ্ত ট্র্যাকিং আইডি এবং পিন নাম্বার সংরক্ষন করতে হবে।
  • সংযোগের  অর্থ  ডাচবাংলা ব্যাংক এর মোবাইল ব্যাংকিং ( রকেট ) এর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। অথবা সরাসরি বিদ্যুৎ অফিসে গিয়েও অর্থ পরিশোধ করা যাবে।

বিদ্যুৎ মিটার আবেদন করতে কি কি ডকুমেন্টস লাগে?

আবেদন করার নিয়মাবলী জানার পর আবেদন করতে কি কি তথ্য লাগে তা জানা জরুরি। আপনারা অনেকেই নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন ফর্ম পূরন করার জন্য কি কি তথ্য, কাগজপত্র লাগে তা জানেন না যার কারনে গ্রাহককে ফর্ম পূরনের সময় বিভ্রান্তিতে পরতে হয়।

তাই নতুন বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন ফর্ম পূরণ করার জন্য যেই কাগজপত্রগুলো লাগবে তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

  • আবেদনকারীর নাম ও ফোন নাম্বার। 
  • জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার, পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি, স্থায়ী ঠিকানা এবং সংযোগ স্থলের ঠিকানা।
  • জমির খারিজ/দলিলের স্ক্যান করা কপি লাগবে।
  • যেই ট্রান্সফরমার থেকে সংযোগ নিতে চাচ্ছেন সেই ট্রান্সফরমারের আওতাভুক্ত আপনার পার্শ্ববর্তী গ্রাহকের বই নং ও হিসাব নং সংগ্রহ করতে হবে।
  • বাড়ি থেকে নিকটবর্তী সার্ভিস পোলের দুরত্ব ১৩০ মিটারের কম না বেশি তা মেপে দেখতে হবে।
  • বাড়িতে ব্যবহৃত সকল ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস এর মোট লোডের পরিমাণ এবং সংখ্যা নির্বাচন করে দিতে হবে।
  • হাউজ ওয়্যারিং নিশ্চিত প্রমাণ করতে গ্রাউন্ড রডের ক্যাশ ম্যামোর স্ক্যান কপি লাগবে।

উপরে উল্লেখিত ডকুমেন্টস ছাড়া আপনি অনলাইনে বিদ্যুৎ মিটারের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদনের নিয়ম

আপনি ঘরে বসে নিজে নিজেই মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে নতুন বিদ্যুৎ মিটারের জন্য আবেদন করতে পারবেন। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আপনি দুই ভাবে আবেদন করতে পারবেন। যথাঃ ১। সরাসরি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে অথবা ২। অনলাইনের মাধ্যমে। আজকের ব্লগটিতে আমরা অনলাইনে কিভাবে নতুন বিদ্যুৎ মিটারের জন্য আবেদন করতে হয় তা জানব।

নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে নতুন বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন ফর্মটি পূরণ করুনঃ

ধাপ-১ঃ ওয়েবসাইটে প্রবেশ

আপনি নিজের মোবাইল, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে যেকোন ব্রাউজারে গিয়ে সার্চবারে rebpbs লিখে সার্চ করবেন। তাহলেই আপনি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট http://www.rebpbs.com/ এ ঢুকতে পারবেন। এরপর মেনুবার এর আবেদন থেকে আবেদন করুন অপশনে ক্লিক করুন।

পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের জন্য আবেদন ১

ধাপ-২ঃ বিদ্যুৎ অফিস, সংযোগ এবং আবেদনকারীর তথ্য প্রদান

পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের জন্য আবেদন ২

আবেদন করুন অপশনে ক্লিক করার পরার উপরের ছবির মত একটি পেইজ প্রদর্শিত হবে। এটিই হচ্ছে নতুন বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন ফর্ম। ফর্মের প্রথমেই আপনাকে বিদ্যুৎ অফিসের বিবরন দিতে হবে। এখানে আপনি আপনার এলাকা অনুযায়ী জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এবং জোনাল অফিস লিস্ট থেকে সিলেক্ট করবেন।  

সংযোগের ট্যারিফ হিসেবে ‘এলটি-এ’ আবাসিক ( একক বাসা বাড়ির ক্ষেত্রে ) বা ‘এমটি-এ’ আবাসিক ( বহুতল ফ্ল্যাট এর ক্ষেত্রে ) সিলেক্ট করবেন।

এরপর আবেদনকারীর বিবরণ অংশে আপনার নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ, ফোন নাম্বার, টিআইএন ( TIN ) number সব তথ্য পূরণ করবেন।

ধাপ-৩ঃ স্থায়ী ঠিকানা এবং প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ সংযোগ স্থলের বিবরণ প্রদান

পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের জন্য আবেদন ৩

ফর্মের নিচের অংশে রয়েছে স্থায়ী ঠিকানা আর প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ সংযোগস্থলের বিবরণ। আপনার জেলা-উপজেলা-থানা-ইউনিয়ন ইত্যাদি নির্বাচন করবেন। তারপর আপনি যেই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ নিবেন সেখানকার ঠিকানা দিবেন। খেয়াল রাখবেন সংযোগস্থলের ঠিকানার সাথে জমির নামজারি/ দলিলে প্রদত্ত ঠিকানা যাতে একই হয়।

ঠিকানা নির্বাচনের সময় লাল (*) চিহ্ন দেওয়া বক্সগুলো অবশ্যই পূরন করতে হবে।

ধাপ-৪ঃ জিওগ্রাফিক, কানেকশন, লোড এবং চাহিদাকৃত লোড এর তথ্য দান

পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের জন্য আবেদন ৪

এবার জিওগ্রাফিক তথ্য পূরন করার পূর্বে আপনার সংযোগস্থল থেকে নিকটবর্তী সার্ভিস পোলের দূরত্ব সঠিকভাবে মেপে নিবেন। দূরত্ব মাপে ভুল হলে ক্যাবল তার অথবা খুঁটির জন্য সংযোগ পেতে বিলম্ব হতে পারে।

যেই ট্রান্সফরমার থেকে সংযোগ নিতে চাচ্ছেন সেই ট্রান্সফরমারের আওতায় আপনার পার্শ্ববর্তী গ্রাহকের বই নং, হিসাব নং মিটার নাম্বার ও পোল নাম্বার ইংরেজিতে পূরন করতে হবে। আবেদন প্রকৃতি ( স্থায়ী/ অস্থায়ী ) নির্ধারন করতে হবে।

লোড অংশে আপনার বাড়িতে ব্যবহৃত যত ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসপত্র আছে সেগুলোর সংখ্যা এবং কোন ডিভাইস কতটুকু কারেন্ট খরচ করে সেই হিসাব ও দিতে হবে।

ধাপ-৫ঃ ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং খারিজ এর কপি সংযুক্ত করন

পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের জন্য আবেদন ৫

সবশেষে আপনার পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং খারিজ/ দলিলের স্ক্যান করা কপি সংযুক্ত করতে হবে। ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র বক্সে নির্ধারিত সাইজ অনুযায়ী সংযুক্ত করতে হবে।

ধাপ-৬ঃ সম্মতি প্রদান ও ক্যাপচা পূরন

আবেদন ফর্মের একদম শেষে কতগুলো শর্তাবলী আছে সেগুলো ভালোমত পড়ে সেটির সাথে আপনি একমত হলে পাশের খালি বক্সে টিক চিহ্ন দিবেন। তারপর ক্যাপচা কোডটি পূরন করে সংরক্ষন অপশনে ক্লিক করুন।

সংরক্ষন অপশনে ক্লিক করার পর আপনাকে একটি পিন নাম্বার এবং ট্র্যাকিং নাম্বার দেয়া হবে সেটি সংরক্ষন করে রাখবেন। পরবর্তিতে বিদ্যুৎ মিটার আবেদন অনুসন্ধানে পিন নাম্বার এবং ট্র‍্যাকিং নাম্বার প্রয়োজন হবে। আপনি চাইলে ফর্মটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।

হাউজ ওয়্যারিং নিশ্চিত করার উপায়

হাউজ ওয়ারিং হলো আপনার বাসায় লাইট,ফ্যান, টেলিভিশন ইত্যাদি ডিভাইস এর বিদ্যুৎ লাইন টানা।

এটি ২ ধরনের। যথাঃ ১। কনসিলড ওয়্যারিং এবং ২। ওপেন ওয়্যারিং।

কনসিলড ওয়্যারিং হচ্ছে দেয়ালের ভিতরে যে কারেন্টের লাইন টানা হয় আর ওপেন ওয়্যারিং হচ্ছে দেয়ালের বাইরে বা সারফেসে চ্যানেলের বা পাইপের মাধ্যমে যে কারেন্ট লাইন টানা হয় সেটি।
এখন আবেদনকারীর বাসায় হাউজ ওয়্যারিং নিশ্চিত করার জন্য এই ধাপটি অনুসরণ করতে হবে। হাউজ ওয়ারিং নিশ্চিত করতে আপনার প্রয়োজন হবে পিন, ট্র্যাকিং নাম্বার ও গ্রাউন্ড রড ক্রয়ের ক্যাশ মেমো। প্রথমে আপনাকে ওয়েবসাইটে ঢুকে মেনুবার থেকে আবেদন অপশনে কীবোর্ডের কারসর রাখলে হাউজ ওয়্যারিং নিশ্চিত করুন অপশনটি দেখতে পাবেন।

পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের জন্য আবেদন ৬

এরপর আপনি নিচের ছবির মত একটি পেইজ দেখতে পাবেন।

পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের জন্য আবেদন ৭

এবার আপনার পিন নাম্বার এবং ট্রাকিং নাম্বার দিয়ে সাবমিট অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর আপনার বাড়ির হাউজ ওয়্যারিং নিশ্চিত হয়েছে কিনা সেটার প্রমান দিতে হবে। সেজন্য হাউজ ওয়্যারিং নিশ্চিত হয়েছে অপশনে ক্লিক করুন এবং আপনার গ্রাউন্ড রড কেনার ক্যাশ ম্যামো নাম্বারটি ইংরেজিতে লিখুন। তারপর ক্যাশ ম্যামোর একটি স্ক্যান করা কপি আপলোড করতে হবে। সবশেষে  ঠিকানা এবং ক্যাপচা কোড পূরন করে সমর্পণ করুন অপশনে ক্লিক করুন। এখন হাউজ ওয়্যারিং নিশ্চিত হয়েছে এমন একটি ম্যাসেজ দেখতে পাবেন।

আবেদনের সংযোগ ফি প্রদান

পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন ফি ১১৫/- (একশত পনেরো টাকা ) মাত্র। আপনি টাকা মোবাইল ব্যাংকিং রকেট এর মাধ্যমে অথবা সরাসরি বিদ্যুৎ অফিসে যেয়ে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। তবে টাকা বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে প্রদান করাই ভালো।

বিদ্যুৎ মিটার আবেদন সংক্রান্ত প্রশ্ন-উত্তর

১। পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন করার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট কোনটি?

উঃ বাংলাদেশ পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির অথেন্টিক ওয়েবসাইট- rebpbs.com । 

২। নতুন বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন করতে কত টাকা লাগে?

উঃ বিদ্যুৎ মিটারের আবেদন করতে ১১৫ টাকা পরিশোধ করতে হয়।

৩। বাড়ি থেকে সার্ভিস পোলের দূরত্ব কত ফুট হতে হবে?

উঃ বাড়ির বা সংযোগস্থল থেকে পোলের দুরত্ব ১৩০ ফুট বা প্রায় ৪০ মিটারের মধ্যে হতে হবে।

৪। সার্ভিস পোলের বা খাম্বার দুরত্ব ১৩০ ফুটের বেশি হলে কি করতে হবে?
উঃ দুরত্ব যদি ১৩০ ফুটের চেয়ে বেশি হয় সেক্ষেত্রে নতুন আরেকটি পোল স্থাপন করতে হবে তারপর বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হবে।

আরও পড়ুন

শেয়ার করুন

Leave a Comment