বর্তমান সময়ে প্রতিটি নাগরিকের পাসপোর্ট থাকা আবশ্যক। জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধনের মত পাসপোর্ট ও একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস। আপনি যেকোন দেশে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য আপনার পাসপোর্ট করা লাগবে । শিক্ষা, চিকিৎসা, ভ্রমণ কিংবা ব্যবসা বাণিজ্য যেই প্রয়োজনেই হোক বিদেশে যেতে হলে পাসপোর্ট থাকা আবশ্যক।
আপনারা অনেকেই হয়তো পাসপোর্ট করতে চান কিন্তু পাসপোর্ট করার জন্য কি কি ডকুমেন্টস লাগে, আবেদন কীভাবে করতে হয় এসব বিষয় জানেন না। তাই আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জন্য পাসপোর্ট করার নিয়ম বিস্তারিত আলোচনা করব।
আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি পাসপোর্ট করার পুরো প্রক্রিয়াটি জানতে পারবেন। তাই দেরি না করে চলুন জেনে নেয়া যাক পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়াটি।
ই পাসপোর্ট করতে কি কি ডকুমেন্টস লাগবে?
পাসপোর্ট আবেদন করার আগে আপনাকে জানতে হবে পাসপোর্ট করতে কি কি ডকুমেন্টস লাগে। নিম্নে পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় যেসব কাগজপত্রের প্রয়োজন তা উল্লেখ করা হলোঃ
- অনলাইন ই-পাসপোর্ট আবেদন ফর্মের কপি
- ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি। ভোটার আইডি না থাকলে জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি।
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
- আপনি যেই পেশায় নিয়োজিত আছেন তার প্রমাণ হিসেবে আপনাকে ডকুমেন্টস দিতে হবে। যদি চাকরি করেন তাহলের চাকরির আইডি কার্ড বা এপয়েন্টমেন্ট লেটার, স্টুডেন্ট হলে একাডেমিক সার্টিফিকেট।
- ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র
- ইউটিলিটি বিলের ( পানি/গ্যাস/বিদ্যুৎ ) ফটোকপি
- অনলাইন আবেদনের সামারি/ সারাংশের কপি
- ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি প্রদানের রিসিপ্টের কপি
উপরে উল্লেখিত কাগজপত্রগুলো আপনাকে পাসপোর্ট আবেদনের সময় জমা দিতে হবে। তাই আগে থেকে সকল ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে রাখবেন।
ই পাসপোর্ট করার নিয়ম
ডিজিটাল যুগে ধীরে ধীরে সব কিছুই অনলাইন এর আওতায় চলে আসছে। বর্তমানে এনআইডি, জন্ম নিবন্ধন, টিন সার্টিফিকেট ইত্যাদি যেকোন ডকুমেন্টস এর জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়। অনলাইনে আবেদন করা যায় দেখে ভোগান্তিও অনেকটা কমে গেছে। বাইরে যেয়ে রাস্তার জ্যাম, সরকারি অফিসে যেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়না। আপনি খুব আরামে ঘরে বসে নিজের মোবাইল বা কম্পিউটার দিয়ে আবেদন করতে পারবেন।
পাসপোর্টের আবেদন করার জন্য প্রথমে আপনাকে https://www.epassport.gov.bd/ এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। হোম পেইজ থেকে Apply online for a passport অপশন নির্বাচন করে তারপর Step by Step সব তথ্য পূরণ করতে হবে। অনলাইনে পাসপোর্ট ফি প্রদান করতে হবে। তাহলে অনলাইনে আপনার পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া কমপ্লিট হয়ে যাবে। এবার আবেদন করার পুরো প্রক্রিয়াটি জানার জন্য পরবর্তী অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ই পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম পূরণ করার নিয়ম
ই পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য প্রথমে আপনাকে মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে যেকোন একটি ব্রাউজারে গিয়ে সার্চবারে epassport.gov.bd লিখে সার্চ করতে হবে। তাহলে আপনি পাসপোর্ট করার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবেন। এরপর আপনাকে পর্যায়ক্রমে কতগুলো তথ্য পূরণ করতে হবে। নিম্নের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনার পাসপোর্ট আবেদন সম্পন্ন করুনঃ
ধাপ-১ঃ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্বাচন
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর আপনাকে Apply online for e-passport অপশন নির্বাচন করতে হবে।
Step-1 এ আপনার নিকটবর্তী যে পাসপোর্ট অফিস রয়েছে সেটির ঠিকানা দিতে হবে। পাসপোর্ট অফিসের অবস্থান, জেলা এবং থানা নির্বাচন করতে হবে।
ধাপ-২ঃ ইমেইল অ্যাড্রেস যাচাই
Step-2 তে আপনাকে ইমেইল অ্যাড্রেস দিয়ে ইমেইল আইডি ভেরিফাই করতে হবে। step-3 তে আপনার একাউন্ট ইনফরমেশন দিতে হবে। একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিতে হবে। পাসওয়ার্ড নিশ্চিত করণের জন্য পুনরায় পাসওয়ার্ড টাইপ করুন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী আপনার নাম, আপনার ফোন নাম্বার দিয়ে create account অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ-৩ঃ লগইন এবং পাসপোর্টের ধরন নির্বাচন
ই-পাসপোর্ট আকাউন্ট আক্টিভ্যাট করার জন্য আপনার ইমেইল অ্যাড্রেসে একটি ইমেইল পাঠানো হবে। ইমেইলে প্রাপ্ত লিংকে প্রবেশ করার পর ওয়েবসাইটে পুনরায় আপনার ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে হবে। অতঃপর পাসপোর্টের ধরণ ordinary নির্বাচন করে save and continue বাটনে ক্লিক করুন। Ordinary পাসপোর্ট হচ্ছে সাধারন নাগরিকদের জন্য আর Official পাসপোর্ট সাধারণত উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের জন্য।
ধাপ-৪ঃ ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ এবং ঠিকানা নির্বাচন
পাসপোর্টের ধরণ নির্বাচন করার পর পরবর্তী পেইজে I apply for myself অপশনে টিক চিহ্ন দিবেন । তারপর আপনার জেন্ডার, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী নাম, পেশা, ধর্ম, জন্মস্থল, জন্ম তারিখ প্রদান করতে হবে। এরপরের পেইজে আপনার বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা নির্বাচন ( জেলা, গ্রাম, শহর, রোড, ব্লক, বাড়ি নং, পোস্ট কোড ইত্যাদি) করতে হবে। আপনি চাইলে আপনার বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা একই দিতে পারেন।
ধাপ-৫ঃ আইডি তথ্য পূরণ
যেহেতু আমরা নতুন পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করছি তাই আপনি ছবিতে দেখানো ৩নং অপশনটি ( লাল চিহ্ন দেওয়া) নির্বাচন করবেন। প্রথম দুইটি হচ্ছে যাদের পূর্বে পাসপোর্ট ছিল এখন পাসপোর্ট রিনিউ করতে চাচ্ছে অথবা MRP থেকে ই পাসপোর্ট করবেন তাদের জন্য। তারপর আপনার অন্য কোন দেশের পাসপোর্ট আছে কিনা নির্বাচন করতে হবে এবং এনাআইডি নাম্বার টাইপ করতে হবে।
ধাপ-৬ঃ পিতা-মাতা, স্বামী/ স্ত্রী এবং জরুরি যোগাযোগের তথ্য পূরণ
এই ধাপে আপনাকে নিজের পিতা-মাতার এবং আপনি বিবাহিত হলে স্বামী/ স্ত্রীর পেশা, জাতীয়তা এবং এনআইডি নাম্বার দিতে হবে। তারপর Emergency contact এ আপনার বাবা-মা অথবা স্পাউসের তথ্য দিতে পারেন। এমন কারো তথ্য দিবেন যাতে যেকোন জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যায়।
ধাপ-৭ঃ পেইজ সংখ্যা এবং ডেলিভারির ধরণ নির্বাচন
এখন আপনি কত পেইজের পাসপোর্ট নিতে চান সেটি সিলেক্ট করতে হবে। ৪৮ পেইজের ৫/১০ বছর অথবা ৬৪ পেইজের ৫/১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট বানানো যায়। আপনি আপনার সুবিধা এবং প্রয়োজন অনুসারে সেটি নির্বাচন করবেন। এরপর ডেলিভারির ধরণ (রেগুলার/ একপ্রেস/ সুপার এক্সপ্রেস) সিলেক্ট করতে হবে। পেইজ সংখ্যা, পাসপোর্টের মেয়াদ, ডেলিভারির ধরনের উপর নির্ভর করে আপনার আবেদন ফি নির্ভর করবে।
ধাপ-৮ঃ পাসপোর্ট ফি প্রদান এবং ডাউনলোড
ফর্ম এ প্রদান করা সব তথ্য সঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত করে Confirm and proceed to payment অপশনে ক্লিক করুন। ভালোমত সব তথ্য যাচাই করে দেখবেন কারণ একবার সাবমিট করে দিলে পুনরায় তথ্য সংশোধন করা অনেক ঝামেলা।
আপনি অনলাইন বা অফলাইন যেকোন মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। আপনার সুবিধামত যেকোন একটি অপশন নির্বাচন করুন।
আবেদন সম্পন্ন করার পর আপনি নিচের ছবির মত একটি পেইজ দেখতে পাবেন।
সেখানে আপনার দেওয়া তথ্যগুলো দেখতে পারবেন এবং পেইজের উপরে ডানদিকে অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম এবং ফর্মের summary ডাউনলোড করার অপশন থাকবে Download Application Form for Printing তে ক্লিক করে ফর্মটি ডাউনলোড করে নিবেন আর Print summary অপশনে ক্লিক করে ফর্মের সামারি বা সারাংশ ডাউনলোড করবেন। তারপর যেকোন কম্পিউটার এর দোকান থেকে ফর্মটি ডাউনলোড করে নিবেন।
বায়োমেট্রিক ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দান
নির্দিষ্ট তারিখে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। আপনার অনলাইনে করা পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম, ব্যাংকে আবেদন ফি পরিশোধের স্লিপসহ অন্যান্য সকল ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে।
এছাড়া আপনার বায়োমেট্রিক ইনফরমেশন দিতে হবে। আপনার ফিঙ্গার প্রিন্ট, রেটিনা স্ক্যান, ডিজিটাল স্বাক্ষর দিতে হবে। সব কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর আপনাকে একটি ডেলিভারি স্লিপ প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে ই-পাসপোর্ট চেক করতে স্লিপ এ প্রদত্ত নাম্বারটি দরকার হবে তাই ডেলিভারি স্লিপটি সাবধানে রাখবেন।
পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করা
পাসপোর্ট আবেদনের সর্বশেষ ধাপটি হলো পুলিশ ভেরিফিকেশন। অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণ করার ১ সপ্তাহের মধ্যে আপনার ফোন নাম্বারে পুলিশ কল আসবে আপনার তথ্য ভেরিফাই করার জন্য আপনাকে তার সাথে দেখা করতে হবে অথবা পুলিশ নিজেও আসতে পারে। আপনার বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা দুই জায়গাতেই পুলিশ ভেরফিকেশন হবে।
পুলিশ ভেরিফাই করার পর ২/১ সপ্তাহের মধ্যেই আপনার পাসপোর্ট রেডি হয়ে যাবে। আপনি চাইলে অনলাইনে আপনার পাসপোর্ট হয়েছে কিনা চেক করে দেখতে পারবেন। পাসপোর্ট তৈরি হয়ে গেলে আপনার ফোনে ম্যাসেজ আসবে। তখন আপনি ডেলিভারি স্লিপটি নিয়ে পাসপোর্টে অফিসে যাবেন আর আপনার পাসপোর্টটি সংগ্রহ করবেন।
আপনি যদি উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং আপনার কাগজপত্র সব কিছু ঠিক থাকে তাহলে আপনার পাসপোর্ট পেতে আর কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। পাসপোর্ট করার জন্য কোন দালাল বা অন্য কারো সহযোগিতার প্রয়োজনও পড়বে না। আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকলে আপনি অন্যদের সাথেও শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।