ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করুন খুব সহজেই

সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটছে । সবকিছু এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। যেকোন তথ্য যখন প্রয়োজন তখনই আমরা ইন্টারনেট থেকে দেখে নিতে পারি। ঠিক তেমনি আপনি যদি গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করতে চান সেটি কয়েক মিনিটের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে জেনে নিতে পারবেন।

আপনি যদি গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করে থাকেন তাহলে আজকের পোষ্টটি আপনারই জন্য। ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন করার পর লাইসেন্স এর অগ্রগতি জানার জন্য সেটি চেক করার প্রয়োজন পরে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স কীভাবে চেক করতে হয় সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানাবো। আর্টিকেলটি পুরো ভালোভাবে পরলে আশা করি বুঝতে পারবেন।

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য কি কি প্রয়োজন?

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য আপনার কিছু তথ্য জানা থাকা লাগবে। অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা খুবই সহজ। নিম্নে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য আপনার যা যা ডকুমেন্টস প্রয়োজন তা উল্লেখ করা হলোঃ

  • ড্রাইভিং লাইসেন্স নাম্বার ( ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য প্রয়োজন )
  • DL রেফারেন্স নাম্বার ( App এর মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য )
  • আপনার জন্ম তারিখ

উপরের ইনফরমেশনগুলো জানা থাকলে আপনি অনলাইনে ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপের মাধ্যমে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করতে পারবেন।

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার মাধ্যম

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য কয়েকটি মাধ্যম রয়েছে । আপনি আপনার সুবিধামত যেকোন একটি মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে নিতে পারেন। বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য তিনটি মাধ্যম রয়েছে। মাধ্যম তিনটি হলো-

  1. BRTA ওয়েবসাইটের মাধ্যমে
  2. DL checker Apps এর মাধ্যমে
  3. মোবাইল sms এর মাধ্যমে

আজকের আর্টিকেলে আমি কোন পদ্ধতিতে কীভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করতে হয় তা জানাবো। সবগুলো নিয়ম জানার পর আপনার কাছে যেটা সহজ এবং সুবিধাজনক মনে হবে আপনি সেই নিয়মে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে নিবেন।

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক

বর্তমানে আপনি ঘরে বসেই অনলাইনে কয়েক মিনিটের মধ্যে নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে নিতে পারবেন। আর কোন পদ্ধতিতে কীভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করতে সে সম্পর্কে এখন বিস্তারিত জানাবো। চলুন দেরি না করে নিয়মগুলো জেনে নেয়া যাক, প্রথমে আমরা জানবো কীভাবে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করতে হয়।

অনলাইনে BRTA ওয়েবসাইটের মাধ্যমে

আপনি যদি অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গাড়ির লাইসেন্স চেক করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে আগে এই লিংকে https://bsp.brta.gov.bd/ প্রবেশ করতে হবে। তারপর হোম পেইজের উপরে Register অপশনে ক্লিক করে আপনার NID number, মোবাইল নাম্বার এবং জন্মতারিখ দিয়ে register করতে হবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার ওয়েবসাইট

রেজিস্টার করার পর আপনাকে একটি পাসওয়ার্ড নিতে হবে। এরপর পাসওয়ার্ড ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে পোর্টালে লগইন করে আপনি লাইসেন্স সংক্রান্ত যেকোন তথ্য যেনে নিতে পারবেন।

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার জন্য তথ্য পূরণ

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখবেন, আপনি যেই ফোন নাম্বারটি ইউজ করেছেন সেটি যেন আপনার এনআইডি দিয়ে রেজিস্টার করা থাকে।

BRTA DL checker Apps এর মাধ্যমে

আপনার মোবাইলের গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে BRTA DL checker App  লিখে সার্চ দিলে আপনি অ্যাপটি পেয়ে যাবেন। এবার অ্যাপটি ইন্সটল করুন। তারপর অ্যাপ ওপেন করে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স নাম্বার কিংবা রেফারেন্স নাম্বার এবং জন্মতারিখ দিয়ে সার্চ করলেই আপনি আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স হয়েছে কিনা তা জানতে পারবেন। আপনাদের বুঝার সুবিধার্থে নিচে পয়েন্ট আকারে উল্লেখ করা হলোঃ 

ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার মোবাইল অ্যাপ
  • প্রথমে আপনাকে গুগল প্লে স্টোর থেকে BRTA DL checker অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে।
  • এরপর অ্যাপ ওপেন করে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স নাম্বার/ রেফারেন্স নাম্বার ( DL no./ Ref no.) দিন।
  • Date of Birth লেখা বক্সে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী জন্মতারিখ নির্বাচন করুন।
  • এবার সার্চ অপশনে ক্লিক করলে আপনি আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স স্ট্যাটাস দেখতে পারবেন। 
মোবাইল অ্যাপে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর তথ্য

এভাবে আপনি আপনার ফোন দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করতে পারবেন। DL no দিয়ে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সটি আসল নাকি ভুয়া সেটি জানতে পারবেন আর BRTA Ref no এর মাধ্যমে আপনার লাইসেন্স বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন। রেফারেন্স নাম্বার আপনার ডেলিভারি স্লিপের উপরের অংশে পেয়ে যাবেন। 

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ অনেক সময় DL checker অ্যাপে নির্ভুল তথ্য প্রদানের পরও যদি কোন তথ্য দেখতে না পান, এর দুইটি কারণ থাকতে পারে যথাঃ 

  • প্রথমত, আপনার লাইসেন্স এর প্রগ্রেস এখনো পেন্ডিং অবস্থায় আছে 
  • দ্বিতীয়ত, Apps-টিতে হয়তো কোন টেকনিক্যাল প্রব্লেম হয়েছে কিংবা আপডেট কার্যক্রম চলছে যার কারণে অ্যাপ এর সেবাসমূহ সাময়িক স্থগিত আছে।

আর আপনার লাইসেন্স ডেলিভারির Date যদি পার হয়ে যায় সেক্ষেত্রে দুঃচিন্তার কোন কারণ নেই। কাছের কোন BRTA অফিসে যেয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনার ডেলিভারি স্লিপ এর নাম্বার দেখে তারা আপনার লাইসেন্স এর অনুমোদন এসেছে কিনা সেই সম্পর্কে আপনাকে অবগত করতে পারবে।

মোবাইল এসএমএস ( SMS ) এর মাধ্যমে

আপনি মোবাইলে এসএমএস অপশনের মাধ্যমেও লাইসেন্স চেক করতে পারেন। মোবাইল sms এর মাধ্যমে গাড়ির লাইসেন্স চেক করা তুলনামূলক সহজ। মোবাইলের message অপশনে গিয়ে DL স্পেস রেফারেন্স নাম্বার অর্থাৎ DL<space>লাইসেন্স নাম্বার/ DL.Ref. নাম্বার লিখে 26969 নাম্বারে পাঠিয়ে দিন। 

এসএমএস পাঠানোর কিছুক্ষণ পর, এই ধরুন ২/১ মিনিটের মধ্যেই আপনার কাছে একটি ফিরতি message আসবে সেখানে লাইসেন্স এর বর্তমান অবস্থা জানিয়ে দেয়া হবে। বুঝার সুবিধার জন্য পুরো প্রক্রিয়াটি নিম্নে পয়েন্ট আকারে লিখা হলোঃ

  • প্রথমে মোবাইলের message অপশন অন করুন।
  • DL<space>লাইসেন্স নাম্বার/ DL.Ref. নাম্বার ( উদাহরণ- DL 101239866 ) টাইপ করুন।

এরপর আরেকবার চেক করে দেখুন লাইসেন্স/ রেফারেন্স নাম্বার ঠিক আছে কিনা তারপর 26969 নাম্বারে পাঠিয়ে দিন।

উপরে বর্ণিত ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি খুব দ্রুত ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে ফেলতে পারবেন। যাদের গাড়ি আছে তাদের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা আবশ্যক। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। তাছাড়া আগের তুলনায় এখন লাইসেন্স করা সহজ। আপনি অনলাইনে আবেদন করা থেকে শুরু করে আবেদনের স্ট্যাটাস চেক সবকিছুই নিজের হাতে থাকা স্মার্ট ফোন দিয়ে করতে পারবেন। 

FAQs

১। নাম দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা যায় কি?

উঃ না, আপনি নাম দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করতে পারবেন না। কারণ একই নামে একাধিক ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে পারে কিংবা আবেদন করা থাকতে পারে।

২। ড্রাইভিং লাইসেন্স আসতে কতো সময় লাগবে?

উঃ সাধারণত ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ১৫দিন থেকে ১ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। কিছু ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশিও সময়ও  লাগতে পারে। 

৩। গাড়ির  লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে?

উঃ ভিন্ন ভিন্ন যানবাহনের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স এর টাকা কম-বেশি হতে পারে। মোটরসাইকেলের জন্য ৩৪৫ টাকা এবং নরমাল মোটরযানের জন্যও ৩৪৫ টাকা লাগে। যারা পেশাগতভাবে ড্রাইভার তাদের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ১৬৮০ টাকা ( ৫ বছরের নবায়ন সহ ) এবং অপেশাদের ড্রাইভারদের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ২৫৪২ টাকা ( ১০ বছরের নবায়ন সহ )।

৪। লাইসেন্স রিনিউ করতে কতো টাকা লাগে?

উঃ আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স রিনিউ করতে প্রায় ৪১৫২ টাকা লাগবে। রিনিউ করার টাকা পরিশোধ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস নিয়ে BRTA এর অফিসে গিয়ে আবেদন করতে হবে।

৫। লাইসেন্স এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে করনীয়?

উঃ আপনার লাইসেন্স এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে একইসাথে মেয়াদ উত্তীর্ণের ১৫ দিন পার হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে প্রতি বছর হিসেবে ৫১৮ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। 

৬। ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য সর্বনিম্ন কত বছর বয়স হতে হয়?

উঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন করার জন্য মিনিমাম ১৮ বছর বয়স হতে হবে।

আরও পড়ুন

শেয়ার করুন

Leave a Comment