ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম, ফি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

গাড়ি চালকদের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যাবশ্যকীয়। পেশাদার হোক বা অপেশাদার যারা ড্রাইভিং করে তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা উচিত। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো দন্ডনীয় অপরাধ।

আপনারা যারা নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন করতে চান তাদের জন্য আজকের এই পোস্টটি। আজকের আর্টিকেলে আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন করার নিয়ম, আবেদন ফি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি লাগবে এ সমস্ত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগবে?

ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন করার জন্য আপনাকে কিছু ডকুমেন্টের স্ক্যান কপি জমা দিতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য নিম্নে উল্লেখিত কাগজপত্রগুলো প্রয়োজন।

  • রেজিস্টার ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট
  • আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি
  • আবেদনকারীর ছবি ( ছবির সাইজ ৩০০x৩০০ পিক্সেল হতে হবে )
  • ইউটিলিটি বিলের (বিদ্যুৎ/ পানি/ গ্যাস বিলের) স্ক্যান কপি
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট ( নূন্যতম ৮ম শ্রেণী পাস হতে হবে )

উপরের কগজপত্রগুলো আগে থেকে রেডি করে রাখবেন। যাতে আবেদন করার সময় কোন সমস্যায় পরতে না হয়।

ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম

ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন করা একটু ঝামেলার হলেও আপনি সেটি ঘরে বসে সময় নিয়ে আরামে করতে পারবেন। তো ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন করতে হলে আপনাকে প্রথমে BRTA এর ওয়েবসাইটে যেয়ে আপনাকে নিবন্ধন ফর্ম পূরণ করতে হবে। আবেদন করার দুই থেকে আড়াই মাস পর লিখিত, মৌখিক এবং ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার তারিখ আবেদনের পর পরই এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

নিম্নে ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন  করার নিয়ম নিয়ে  বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

ধাপ-১ঃ ওয়েবসাইটে প্রবেশ

আপনি নিজের মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে যেকোন ব্রাউজারে গিয়ে সার্চবারে brta service portal লিখে সার্চ করুন। সার্চ রেজাল্টে আসা প্রথম ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। অথবা এই লিংকে https://bsp.brta.gov.bd/  সরাসরি ভিজিট করতে পারেন। হোম পেইজ থেকে নিবন্ধন অপশনে ক্লিক করুন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স করার ওয়েবসাইট
তাহলে নিচের ছবির মত একটি পেইজ দেখতে পাবেন। হোম পেইজ থেকে নিবন্ধন অপশনে ক্লিক করুন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন করার নিয়ম

ধাপ-২ঃ একাউন্ট নিবন্ধন করা

একাউন্ট নিবন্ধন করার জন্য আপনাকে নিজের মোবাইল নাম্বার, জন্ম তারিখ এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার দিতে হবে। আপনার এনআইডি নাম্বার যদি ১৩ ডিজিটের হয় তাহলে আপনার এনআইডি নাম্বার এর আগে আপনার জন্ম সাল লিখতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনের ফরম পূরণ
কিছুক্ষণ পর আপনার মোবাইলে একটি OTP কোড আসবে। তিন মিনিটের মধ্যে আপনাকে OTP কোডটি লিখতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনের ওটিপি যাচাই
এরপর নিচের ছবির মত একটি পেইজ প্রদর্শিত হবে। সেখানে আপনার নাম, জন্ম তারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার, মোবাইল নাম্বার, ইমেইল আইডি দিতে হবে। এবার একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে সেটি নিশ্চিত করুন তাহলে আপনার নিবন্ধন সম্পন্ন হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য একাউন্ট তৈরি

ধাপ-৩ঃ ইউজার প্রোফাইলে তথ্য পূরণ করা

একাউন্ট নিবন্ধন করার পর লগইন করতে হবে। আপনার ইউজার নেইম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ওয়েবসাইটে লগইন
লগইন করার পর একটি ড্যাশবোর্ড দেখতে পাবেন। ড্যাশবোর্ডের গোল আইকনে ক্লিক করে প্রোফাইলে যাবেন অথবা হোম অপশনে ক্লিক করেও প্রোফাইলে যাওয়া যাবে।
বিআরটিএ একাউন্টে প্রবেশ
ইউজার প্রোফাইলে আপনার একটি ছবি আপলোড করতে হবে (ছবির সাইজ ৩০০x৩০০ পিক্সেল এবং ১৫০ কিলোবাইট হতে হবে)। প্রোফাইলে আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেখতে পাবেন। অতঃপর আপনার পিতা-মাতার নাম বাংলা এবং ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে লিখবেন। অন্যান্য তথ্য নির্বাচন করবেন। সব তথ্য পূরণ করার পর প্রোফাইল হালনাগাদ অপশনে ক্লিক করবেন।

ধাপ-৪ঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন

ড্যাশবোর্ড থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স-> ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন এ ক্লিক করলে  ড্রাইভিং লাইসেন্স করার পূর্বশর্তগুলো দেখতে পারবেন। শর্তগুলো ভালোমতে পরে আমি সম্মত অপশনে ক্লিক করবেন। পরবর্তী পেইজে আপনি নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যগুলো দেখতে পাবেন। তারপর Next অপশনে ক্লিক করলে নিচের ছবির মত একটি পেইজ আসবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন
এবার আপনি আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ধরন (পেশাদার/ অপেশাদার) নির্বাচন করে Next অপশনে ক্লিক করবেন।

ধাপ-৫ঃ আবেদনকারীর তথ্য এবং ঠিকানা নির্বাচন

পরবর্তী ধাপে আপনাকে নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন তাহলে স্ত্রীর নাম, রক্তের গ্রুপ, লিঙ্গ, পেশা, জাতীয়তা ইত্যাদি তথ্য নির্বাচন করে Next-এ ক্লিক করবেন। 
এবার আপনার সাথে যোগাযোগের বিবরণ ও জরুরী যোগাযোগের বিবরণ এবং বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা দিতে হবে। স্থায়ী ঠিকানা আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী সিলেক্ট করতে হবে কারণ স্মার্ট কার্ডে স্থায়ী ঠিকান আপনার NID এর স্থায়ী ঠিকানা অনুসারে প্রিন্ট করা হবে। ঠিকানা বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষায় দিতে হবে।

ধাপ-৬ঃ ফাইল সংযুক্তিকরণ এবং স্মার্ট কার্ড প্রাপ্তির ঠিকানা পূরণ

এই পর্যায়ে আপনাকে প্রমাণ হিসেবে কিছু ডকুমেন্টস এর স্ক্যান কপি সংযুক্ত করতে হবে। আপনার মেডিকেল হেলথ সার্টিফিকেট, শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি এবং ইউটিলিটি বিলের ( পানি/ বিদ্যুৎ/ গ্যাস বিল ) স্ক্যান কপি সংযুক্ত করবেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ফাইল জমা
পেইজের নিচের অংশে আপনাকে স্মার্ট কার্ড ডেলিভারি করার ঠিকানা দিতে হবে। আপনি কোন ঠিকানায় আপনার লাইসেন্স কার্ডটি পেতে চান বর্তমান/ স্থায়ী ঠিকানায় সেটি সিলেক্ট করবেন। সব তথ্য ঠিক থাকলে Submit অপশনে ক্লিক করবেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্ড পাওয়ার জন্য ঠিকানা প্রদান

ধাপ-৭ঃ ফি প্রদান

সবশেষে ফি প্রদান করতে হবে। সাবমিট অপশনে ক্লিক করার পর আপনি আরেকটি পেইজ দেখতে পাবেন সেখানে ফি জমা অপশন সিলেক্ট করবেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ফি প্রদান
পরবর্তী পেইজে আপনি আপনার পূরণ করা সকল তথ্য দেখতে পাবেন। এছাড়া আপনার পরীক্ষার তারিখ, স্থান, সময় এসব তথ্যও নিচে দেওয়া থাকবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ফি প্রদান নিশ্চিত করুন
ফি জমা দিন অপশনে ক্লিক করুন। পরের পেইজে নিজের বিকাশ নাম্বার, নাম এবং টাকার পরিমাণ সিলেক্ট করুন। I agree with the payment Terms and Conditions লিখা পাশের বক্সে টিক চিহ্ন দিয়ে ফি প্রদান নিশ্চিত করুন। 
তারপর স্ক্রিনে বিকাশ পেমেন্ট গেটওয়ে-তে আপনার বিকাশ নাম্বার দিন, নাম্বারে আসা OTP কোড এবং বিকাশ পিন নাম্বার দিয়ে ফি প্রদান সম্পন্ন করুন।

Smart card প্রিন্টিং কার্যক্রম শেষ হলে আবেদন ফর্মে দেওয়া ঠিকানায় ডাকযোগে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স আপনার কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

শেয়ার করুন

Leave a Comment