ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা করতে কি কি লাগে

ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ । বাংলাদেশের পূর্ব, পশ্চিম আর উত্তরাঞ্চল জুড়ে রয়েছে ভারতের ৫ টি রাজ্য। পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম,  মেঘালয় রাজ্য আর পূর্বে রয়েছে আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম রাজ্য। 

প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ ভারতে পর্যটনের জন্য যায়। কিন্তু অনেকেই টুরিস্ট ভিসার আবেদন করার জন্য কি কি ডকুমেন্টস লাগে তা ঠিকভাবে জানেনা। ফলে পরবর্তিতে ভিসা বাতিলসহ অন্যান্য ভোগান্তির শঙ্কা থাকে। 

তাই আপনাদের সুবিদার্থে আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা করতে কি কি লাগে এবং ভিসার আবেদন করার সময় কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া উচিত সে সম্পর্কে জানাবো।

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা করতে কি কি লাগে

টুরিস্ট ভিসা করার জন্য সাধারণত পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্মনিবন্ধন, ছবি, ইউটিলিটি বিল, ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট, করোনা সার্টিফিকেট ইত্যাদি কাগজপত্র দরকার হয়। তাই ভিসা আবেদনের জন্য আপনার কি কি কাগজপত্র লাগবে তা জেনে নেয়া যাক।

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসার জন্য যেসব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস দরকার তা হলোঃ

  • একটি বৈধ পাসপোর্ট এবং কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে
  • অনলাইনে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে
  • আপনার সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ( ইঞ্চিতে 2*2,ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা হতে হবে এবং কান দৃশ্যম্যান থাকতে হবে, ছবি ল্যাব প্রিন্টের হতে হবে )
  • এনআইডি কার্ডের ফটোকপি বা জন্মনিবন্ধন এর ফটোকপি
  • কারেন্ট বিল এর ফটোকপি
  • বিগত ৬ মাসের ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট দেখাতে হবে অথবা ১৫০ ডলার এনডোর্সমেন্ট 
  • জমির খতিয়ান / ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি অথবা স্টুডেন্ট আইডির ফটোকপি
  • পূর্বে ইন্ডিয়া ভ্রমণ করে থাকলে সেই ভিসার ফটোকপি
  • মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট
  • পুরানো পাসপোর্ট থাকলে সেটিও নিতে হবে

উপরে যেই কাগজপত্রগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে , সেগুলো টুরিস্ট ভিসার আবেদন করার সময় অবশ্যই জমা দিতে হবে। আপনি ঠিকভাবে ডকুমেন্টস গুলো আগে থেকে গুছিয়ে রাখবেন যাতে পরে কোন সমস্যা না হয়। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যদি আপনার পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন সেক্ষেত্রে  পাসপোর্ট হারানোর সময় আপনি যে এলাকায় ছিলেন সেখানকার একটি থানায় আপনাকে একটি জিডি করতে হবে। আর ভিসা আবেদনের সময় জিডির একটি ফটোকপি ডকুমেন্টস এর সাথে জমা দিতে হবে। 

১. ভিসার আবেদনপত্র

আপনি ইন্ডিয়া ঘুরতে যেতে চাইলে আপনাকে অনলাইনে টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। টুরিস্ট ভিসার আবেদনের জন্য যা যা তথ্য দেওয়া লাগে তা খুব সাবধানতার সাথে করবেন। তারপর এপ্লিকেশন ফর্মটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে। এরপর অন্যান্য ডকুমেন্টসসহ ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টারে আবেদনপত্রটি জমা দিতে হবে।

ভিসার আবেদন করার জন্য এই ওয়েবসাইটে যেতে হবে– Indian Visa Application । তাছাড়া, ভিসা আবেদন অনুমোদন হয়েছে কিনা তা জানার জন্য আবার অনলাইনেই ইন্ডিয়ান ভিসা চেক করতে পারবেন।

২. সদ্য তোলা দুই কপি ছবি

আপনার সাম্প্রতিক সময়ে তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি লাগবে। ছবির ব্যাক গ্রাউন্ড সাদা হতে হবে এবং দুই কান যাতে দেখা যায় এমন ছবি দিতে হবে। আর ছবির সাইজ ২*২ ইঞ্চি হতে হবে।

৩. এনআইডি কার্ডের অথবা জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি

আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিতে হবে। যদি জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকে তাহলে জন্মনিবন্ধনের একটি ফটোকপি দিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন যেন পাসপোর্টের তথ্যের সাথে এনআইডি কার্ড বা জন্মনিবন্ধনের মিল থাকে। 

৪. ইউটিলিটি বিলের কপি

 সাম্প্রতিক সময়ের  বিদ্যুৎ, গ্যাস অথবা পানির বিল যেকোন একটি বিলের ফটোকপি দিতে হবে। যে মাসে ভিসার কাগজপত্র জমা দিবেন বিল এর রিসিট ও যেন সেই মাসের হয়।

৫. ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট 

ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। আপনার ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট সংগ্রহ করতে হবে। ব্যাংকে আপনি কেমন টাকা পয়সা লেনদেন করেন তার একটা প্রমাণ দিতে হবে। অর্থাৎ আপনার স্বছলতার প্রমাণ দিতে হবে। এবং ডলার এনডোর্সমেন্ট করা থাকতে হবে। এনডোর্সমেন্ট করার জন্য আপনি আপনার ব্যাংকে যোগাযোগ করতে পারেন। শুধুমাত্র পাসপোর্টের প্রয়োজন হয় ডলার এনডোর্সমেন্ট করার জন্য।

এখন যে ব্যাংক একাউন্টের স্ট্যাটমেন্ট দিচ্ছেন সেই একাউন্টে মিনিমাম ৬ মাস টাকা লেনদেন করতে হবে। আর স্ট্যাটমেন্ট দেওয়ার টাইমে আকাউন্টে সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা থাকতে হবে

৬. জমির খতিয়ান/ ট্রেড লাইসেন্স/ স্টুডেন্ট আইডি-র কপি

  • আপনি যদি পেশায় একজন কৃষক হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে একটি খতিয়ানের কপি দিতে হবে।
  • পেশায় একজন চাকরীজীবি হলে আপনাকে NOC ( no objection certificate ) লেটার দেখাতে হবে।
  • পেশায় ব্যাবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি দিতে হবে।
  • আর স্টুডেন্ট হলে স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ফটোকপি দিতে হবে। 

৭.পূর্বে ইন্ডিয়া ভ্রমন করে থাকলে সেই ভিসার ফটোকপি

ভারতে যদি এর আগেও ভ্রমণ করে থাকেন তাহলে তখনকার ভ্রমণ ভিসার একটি ফটোকপি জমা দিতে হবে।

৮. মেইন পাসপোর্ট

একটি বৈধ পাসপোর্ট লাগবে। পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে আর পাসপোর্টের ২ টি পাতা খালি থাকতে হবে।

৯. পুরানো পাসপোর্ট

আপনার যদি পুরানো পাসপোর্ট থেকে থাকে তাহলে অন্যান্য ডকুমেন্টেস এর সাথে পুরানো পাসপোর্টটি ও সাথে নিবেন। 

যদি কোন কারনে আপনি আপনার পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন সেক্ষেত্রে যেই জায়গায় হারিয়ে গিয়েছে সেখানে নিকটস্থ কোন থানায় একটি জিডি করে রাখবেন । সেই সাথে জিডির একটি ফটোকপি করে রাখবেন। ভিসা আবেদনের কাগজপত্র জমা দেওয়ার সময় জিডির ফটোকপিটা সংযুক্ত করে দিবেন।

তাই ভিসার আবেদন করার পূর্বে আপনি সব কাগজপত্র গুছিয়ে রাখবেন যাতে পরবর্তীতে ভিসা পেতে কোন জটিলতা তৈরি না হয়। এভাবে উপরে বর্ণিত বিষ্যগুলো মাথায় রেখে ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসার আবেদন করলে আশা করি আপনাকে অন্য কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।

 ইন্ডিয়ান ভিসা বাতিলের কয়েকটি কারণ

বিভিন্ন কারনে ইন্ডিয়ান ভিসা বাতিল হয়ে থাকে । আপনারা অনেকেই ভিসা আবেদনের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস খেয়াল করে জমা দেন না। যে কারনে পরবর্তিতে আপনার ভিসাটি বাতিল হতে পারে। তাই কি কি কারনে ভিসা বাতিল হয় তা নিচে বর্ণনা করা হলো-

  • পাসপোর্টে এবং ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন এ ভিন্ন ভিন্ন স্বাক্ষর থাকলে।
  • পুরানো ছবি ব্যবহার করা, ছবির সাইজ ঠিক না থাকা, ল্যাব প্রিন্ট এর বদলে অন্য কোন প্রিন্টের ছবি ইউজ করলে ভিসা বাতিল হতে পারে।
  • বিদ্যুৎ বিল এবং আবেদন পত্রের বর্তমান ঠিকানা একই না হওয়া ভিসা বাতিল হওয়ার আরেকটি কারণ।
  • ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট যদি ভুয়া হয় বা এনডোর্সমেন্ট ১৫০ ডলার এর কম হয়  সেক্ষেত্রে ভিসা বাতিল হতে পারে।
  • আবেদন পত্রের সাথে প্রয়োজনীয় অন্যান্য ডকুমেন্টস জমা না দেওয়ার কারনেও ভিসা বাতিল করা হয়।

উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে যদি আপনি ভিসার জন্য আবেদন করেন তাহলে আশা করা যায় আপনার ভিসাটি বাতিল হওয়ার আশংকা থেকে মুক্ত। তাই ভিসা আবেদনের সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করে সব বিষয় মাথায় রেখে তারপর ভিসার জন্য আবেদন করবেন। এতে আপনার সময় এবং অর্থ দুটোই বাঁচবে।

আরও দেখুন

শেয়ার করুন

Leave a Comment