আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের অনলাইন জন্ম সনদ নেই। বর্তমানে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন একজন স্কুল শিক্ষার্থীর ভর্তির ক্ষেত্রে, উপবৃত্তির আবেদন করার ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া আপনি যদি নতুন ভোটার হতে চান সেক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন করার জন্যও ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন লাগবে।
তাই আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের দেখাবো কীভাবে ঘরে বসে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে হয়, ডিজিটাল জন্ম সনদ করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করব। পুরো পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পরলে আশা করছি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করা নিয়ে আপনার আর কোন সমস্যা থাকবে না।
ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি কাগজপত্র লাগে?
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার জন্য আপনাকে কিছু ডকুমেন্টস তৈরি করে রাখতে হবে। ডিজিটাল জন্ম সনদ করার জন্য আপনার যেসব কাগজপত্র লাগবে সেগুলো হলোঃ
- জন্ম নিবন্ধন আবেদনকারীর টিকা কার্ড, জন্ম তারিখ, মাস ও সাল।
- পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধনের তথ্য ও ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য।
- স্কুল শিক্ষার্থী হলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়নপত্র দিতে হবে।
- বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা ( বিভাগ, জেলা, ডাকঘর, থানা) । এরপর বাড়ির রোড নং, বাড়ির নাম্বার এসব তথ্যও দিতে হবে।
- একটি সচল মোবাইল নাম্বার এবং ইমেইল একাউন্ট থাকতে হবে।
উপরে উল্লেখ করা তথ্যগুলো আপনার সংগ্রহ করে রাখতে হবে। এই তথ্যগুলো ছাড়া আপনি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন না। এবার আবেদন করার পুরো প্রক্রিয়াটি জানার জন্য আর্টিকেলের নিচের অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম
বর্তমানে আপনি ঘরে বসে খুব সহজে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন। যদি আবেদন করে থাকেন তাহলে তা এখানে (জন্ম নিবন্ধন চেক) চেকও করতে পারবেন। অনলাইনে ডিজিটাল জন্ম সনদের আবেদন করার জন্য প্রথমে আপনাকে বাংলাদেশ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ওয়েবসাইট-https://bdris.gov.bd/br/application এই লিংকে ভিজিট করতে হবে। অতঃপর ধপে ধাপে সকল তথ্য পূরণ করতে হবে। নিম্নে আবেদন করার পুরো প্রক্রিয়াটি ছবিসহ ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হলোঃ
ধাপ-১ঃ ওয়েবসাইটে প্রবেশ
প্রথমে আপনাকে বাংলাদেশের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট bdris.gov.bd/br/application-এ প্রবেশ করতে হবে। তাহলে নিচের ছবির মত একটি পেইজ প্রদর্শিত হবে।
এখন আপনি যেই ঠিকানায় ( জন্মস্থান/ স্থায়ী ঠিকানা )জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে চান সেই অপশনটি সিলেক্ট করে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন। জন্মস্থান অনুযায়ী আবেদন করাটাই শ্রেয়।
ধাপ-২ঃ ব্যক্তির (আবেদনকারীর) তথ্য প্রদান
এখন ‘নিবন্ধনকারী ব্যক্তির পরিচিতি’ এই ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। ব্যক্তির নাম বাংলা এবং ইংরেজিতে সঠিক বানানসহ লিখতে হবে। এরপর জন্ম তারিখ, পিতা-মাতার কততম সন্তান, লিঙ্গ নির্বাচন করতে হবে। জন্মস্থানের ঠিকানা ( দেশ, বিভাগ, ডাকঘর, গ্রাম/ মহল্লা, বাড়ির এবং সড়কের নাম্বার ) পূরণ করতে হবে। ফরমের সব তথ্য পূরণ করা হলে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ-৩ঃ পিতা-মাতার তথ্য প্রদান
ব্যক্তির তথ্য পূরণ করার পরবর্তী ধাপে পিতা-মাতার তথ্য প্রদান করতে হয়। আপনার বাবা-মায়ের জন্ম নিবন্ধন নাম্বার, জন্ম তারিখ দিতে হবে। পিতা-মাতার নাম বাংলা ও ইংরেজিতে লিখতে হবে ( ভোটার আইডি কার্ডে নামের বানান যেভাবে দেওয়া আছে ঠিক একইভাবে লিখতে হবে)। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার ও জাতীয়তা নির্বাচন করে আবারো পরবর্তী অপশন ক্লিক করুন।
ধাপ-৪ঃ ঠিকানা নির্বাচন এবং ফাইল সংযুক্তিকরণ
বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা নির্বাচন করার ক্ষেত্রে নিচের ছবির মত বক্সগুলোতে টিক মার্ক দিয়ে দিবেন তাহলে আপনাকে বারবার ঠিকানা নির্বাচন করতে হবে না। তবে আপনি যদি বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা আলাদা দিতে চান সেক্ষেত্রে আলাদা আলাদাভাবে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা নির্বাচন করা যাবে। আগের মত তথ্য পূরণ করে পরবর্তী অপশন ক্লিক করুন।
পরবর্তী পেইজে আপনাকে আরও কিছু তথ্য দিতে হবে। জন্ম নিবন্ধন আবেদনকারীর বয়স যদি ১৮ বছরের কম হয় তাহলে পিতা-মাতার প্রত্যয়ন/ তথ্য দিতে হবে। নিবন্ধনের স্বপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ সংযুক্ত করতে হবে অর্থাৎ আপনাকে কিছু ফাইল সংযুক্ত করতে হবে।
পিতা অথবা মাতার এনআইডি কার্ডের কপি সংযুক্ত করতে হবে। আর নিবন্ধনকারীর টিকা কার্ডের একটি কপি সংযুক্ত করতে হবে। সংযুক্তকরণ ফাইলের সাইজ সর্বোচ্চ ১০০ কিলোবাইট হতে পারবে এর বেশি হলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না।
ধাপ-৫ঃ ডাউনলোড এবং প্রিন্ট করা
পুরো ফরমটি পূরণ করা কমপ্লিট হলে আপনি একটি preview দেখতে পাবেন অর্থাৎ আপনাদের দেওয়া সকল তথ্য একটি পেইজে প্রদর্শিত হবে। তখন পেইজটি ভালোমত চেক করে দেখবেন সব ইনফরমেশন ঠিক আছে কিনা। কোন তথ্য ভুল হলে সেগুলো পূর্ববর্তী অপশনে ক্লিক করে ঠিক করে নিবেন। কারণ ফরম একবার সাবমিট করে ফেললে সেটি আর ঠিক করা যাবে না।
সবশেষে আপনার ইমেইল আর ফোন নাম্বার প্রদান করবেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার ফোনে একটি OTP কোড আসবে সেটি টাইপ করুন। তাহলে আপনার আবেদন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে যাবে। এরপর আবেদন ফরমটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিবেন। আবেদন ফরমের সাথে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে সব ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন আবেদন সংক্রান্ত প্রশ্ন-উত্তর
১। জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট কোনটি?
উঃ ডিজিটাল জন্ম সনদ করার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট হলো- https://bdris.gov.bd/br/application। এই ওয়েবসাইটে যেয়ে আপনি নতুন জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন।
২। জন্ম সনদের আবেদন করতে কতো টাকা লাগে?
উঃ জন্ম সনদের আবেদন ফি নিবন্ধনকারী ব্যক্তির বয়সের উপর নির্ভর করে। জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে আবেদন করলে কোন ফি পরিশোধ করতে হবে না। বয়স ৪৬ দিন থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হলে ২৫ টাকা পরিশোধ করতে হবে। আর বয়স ৫ বছরের বেশি হলে ৫০ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
৩। জন্ম নিবন্ধনের আবেদন ফি কীভাবে পরিশোধ করতে হয়?
উঃ আপনাকে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন ফি পরিশোধ করতে হবে। বিকাশ, নগদ, উপায় ইত্যাদি অ্যাপের মধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন।
৪। জন্ম নিবন্ধন আবেদনের অবস্থা যাচাই করতে হয় কীভাবে?
উঃ আপনার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন আবেদনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে এই লিংকে- https://bdris.gov.bd/br/application/status ভিজিট করতে হবে। ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে আপনি জন্ম নিবন্ধন এর অগ্রগতি বা বর্তমান অবস্থা যাচাই করতে পারবেন।