দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্যই জন্ম নিবন্ধন একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট। বিশেষ করে যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্য যেকোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বা অন্য যেকোন দরকারে আপনার জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন।
বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে এটি আপনার পরিচয়পত্র হিসেবে লাগবে।এছাড়া পরবর্তীতে জাতীয় পরিচয়পত্র করার জন্যও আপনার জন্ম নিবন্ধনের সনদ লাগবে।
এই নিবন্ধনে একজন মানুষের ব্যাক্তিগত সকল তথ্য দেয়া থাকে, যেমনঃ নিজের নাম, মা-বাবার নাম, ধর্ম, জাতীয়তা, ঠিকানা ইত্যাদি। তবে বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অনলাইনকরণ করা হয়েছে। যার ফলে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন, সংশোধন, যাচাই সবকিছুই অনলাইনে করতে হয়।
বর্তমানে আপনি ঘরে বসে নিজের মোবাইল, ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটার থেকে যেকোন ব্রাউজারে কয়েক মিনিটের মধ্যে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করে ফেলতে পারবেন।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার জন্য যা যা লাগবেঃ
আপনার জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সঠিক আছে কিনা তা জানার জন্য জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার কোন বিকল্প নেই। তবে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার জন্য কিছু ডকুমেন্টস লাগবে তা হলোঃ
- জন্ম নিবন্ধন নাম্বার
- জন্ম তারিখ
- একটি স্মার্ট ফোন
- নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ
উপরের তথ্যগুলো সংগ্রহ করা থাকলে আপনি খুব সহজেই অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে হলে আপনাকে বাংলাদেশ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ওয়েবসাইট everify.bdris.gov.bd তে ঢুকতে হবে। তারপর আপনার জন্ম তারিখ এবং জন্ম নিবন্ধন নাম্বার দিয়ে জন্ম সনদ যাচাই করতে পারবেন। আপনাদের সুবিধার্থে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি নিচে দেখানো হলো।
অনলাইনে জন্ম সনদ যাচাই করতে নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করুনঃ
ধাপ-১ঃ জন্ম নিবন্ধন সনদ যাচাই করার ওয়েবসাইট ভিজিট
জন্ম নিবন্ধন সনদ যাচাই করার জন্য আপনাকে প্রথমে বাংলাদেশের সরকার অনুমোদিত অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে https://everify.bdris.gov.bd/ প্রবেশ করতে হবে। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর নিচের ছবির মত একটি form দেখতে পাবেন।
ধাপ-২ঃ জন্ম নিবন্ধন নাম্বার প্রদান
এখন ফর্মে Birth Registration Number বক্সে আপনি আপনার জন্ম সনদে থাকা ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন নাম্বারটি ( Birth Registration Number ) ইনপুট করবেন । জন্ম নিবন্ধন নাম্বার লেখার সময় আপনাকে সাবধানতা অবলম্বন করে নাম্বারটি লিখতে হবে।
ধাপ-৩ঃ জন্ম তারিখ প্রদান
জন্ম নিবন্ধন নাম্বার দেওয়ার পর আপনাকে Date of Birth বক্সে আপনার জন্ম তারিখ লিখবেন। আপনার জন্ম সনদে যেই দিন, মাস ও তারিখ দেয়া আছে সেটি দেখে সাবধানতার সাথে টাইপ করুন।
জন্ম তারিখ দেয়ার সময় ফরমেট খেয়াল রাখবেন। প্রথমে জন্ম সাল, তারপর মাস তারপর দিন অর্থাৎ সাল/মাস/দিন ( YYYY-MM-DD ) এভাবে পর্যায়ক্রমে লিখবেন।
যেমনঃ- আপনার জন্ম সাল যদি ১৯৯৯ সালের ২১ নভেম্বর হয় তাহলে আপনাকে Date of Birth বক্সে 1999-11-21 লিখতে হবে।
ধাপ-৪ঃ ক্যাপচা পূরণ করুন
জন্ম নিবন্ধন নাম্বার এবং ডেট অব বার্থ দেয়ার পর সবশেষে একটি ক্যাপচা পূরণ করতে হবে। একটি অঙ্ক দেয়া থাকবে সেটি সমাধান করে আপনাকে ক্যাপচার নিচের বক্সে বা The answer is বক্সে লিখতে হবে।
ধাপ-৫ঃ search বাটনে ক্লিক করুন
জন্ম সনদ যাচাই করার ফর্মে সকল তথ্য সঠিকভাবে দেওয়ার পর সার্চ বাটনে ক্লিক করতে হবে। সার্চ বাটনে ক্লিক করার আগে আপনার দেওয়া তথ্যগুলো ভালোমত যাচাই করে নিবেন ।
ধাপ-৫ঃ ফলাফল
সার্চ বাটনে ক্লিক করার পর আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধেনর অনলাইন সনদটি দেখতে পাবেন। তারপর আপনার জন্ম সনদের সাথে অনলাইনের সব তথ্য ( নিজের নাম, বাবা-মায়ের নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা ইত্যাদি ) ভালোভাবে মিলিয়ে দেখবেন কোন ভুলত্রুটি আছে কিনা।
কিন্তু সার্চ দেওয়ার পর যদি Record not Found লেখা আসে তাহলে বুঝবেন আপনার ফর্মে দেওয়া তথ্যে কোন ভুল রয়েছে। আর যদি সঠিক তথ্য দেয়ার পর ও Record not Found লেখা আসে তাহলে বুঝবেন আপনার জন্ম নিবন্ধনটি ডিজিটাল নয় অথবা নকল।
জন্ম তারিখ দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই
আপনারা অনেকেই জন্ম তারিখ দিয়ে কিভাবে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে হয় তা জানার জন্য অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঘাঁটাঘাঁটি করেন। অনেক ওয়েবসাইটে আবার জন্ম তারিখ দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার পদ্ধতিও দেখিয়েছে যা আসলে সম্ভব নয়।
কেবল জন্ম তারিখ দিয়ে আপনি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন না। জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার জন্য আপনার জন্ম সনদে থাকা রেজিস্ট্রেশন নাম্বার এবং জন্ম তারিখ দুইটাই লাগবে।
আর রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দিয়ে কিভাবে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে হয় তা এই আর্টিকেলটিতে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
জন্ম নিবন্ধন যাচাই কপি ডাউনলোড
জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে জন্ম নিবন্ধন কপি ডাউনলোড করার কোন অপশন নেই। কিন্তু আপনি চাইলে অন্যভাবে জন নিবন্ধন ডাউনলোড করতে পারেন। নিম্নের পদ্ধতিটি অনুসরণ করে আপনি অনলাইন থেকে জন্ম নিবন্ধন ডাউনলোড করতে পারবেন।
উপরে উল্লিখিত ধাপ-১ থেকে ধাপ -৬ পর্যন্ত অনুসরণ করার পর ফলাফলের পেইজটি আসার পর কী-বোর্ডের Ctrl+p বাটন একসাথে ক্লিক করতে হবে। তাহলে স্ক্রীনে “Print to Pdf” নামে একটি অপশন দেখতে পাবেন। তারপর সেই অপশনে ক্লিক করে আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন ডাউনলোড করতে পারবেন।
আর আপনার প্রিন্টার থাকলে আপনি প্রিন্ট করে রাখতে পারেন, তাহলে আপনাকে পরবর্তীতে আর অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার প্রয়োজন হবে না।
জন্ম নিবন্ধন কেন যাচাই করবেন?
বর্তমানে এই ডিজিটাল যুগে প্রতিটি ক্ষেত্রে যেমনঃ স্কুলে ভর্তি, এনআইডি তৈরি, পাসপোর্ট তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন হয়। নিচে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হলো-
- আপনার জন্ম সনদটি ডিজিটাল এবং আসল কিনা তা বুঝার জন্য।
- ইন্টারনেটের এই যুগে অনলাইনে বিভন্ন টুলস ব্যবহার করে নকল জন্ম নিবন্ধন তৈরি করা সম্ভব । তাই আপনার জন্ম নিবন্ধনটি যাচাই করা দরকার।
- তারপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন হয়।
- নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার জন্য জন্ম নিবন্ধন থাকা আবশ্যক। কারণ আপনার জন্ম সনদের তথ্যের ভিত্তিতে আপনাকে এনআইডি দেয়া হবে।
- আপনার যদি এনআইডি না থাকে সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট করার জন্য আপনার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন থাকা আবশ্যক।
জন্ম নিবন্ধন নিয়ে সাধারন প্রশ্ন-উত্তর
১। নাম দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা যায় কিনা ?
উঃ হ্যাঁ, আপনি চাইলে আপনার নাম দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন। সেজন্য আপনাকে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা কাউন্সিলরের অফিসে যেতে হবে। তারপর সার্ভারে সংরক্ষিত ডেটাবেইজ থেকে ব্যক্তির নাম দিয়ে জন্ম নিবন্ধন এর ইনফরমেশন খুঁজে বের করা যায়।
২। জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার জন্য কোন টাকা লাগে কিনা?
উঃ না, অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার জন্য কোন ফি লাগে না।
৩। জন্ম নিবন্ধনের হেড অফিস কোথায়?
উঃ জন্ম নিবন্ধনের হেড অফিস রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত।