করলা শরীরের জন্য একটি খুবই উপকারি সবজি। এই সবজিটি সারাবছরই বাজারে পাওয়া যায়। তবে তিতা স্বাদযুক্ত হওয়ার কারনে অনেকেই এই সবজিটি খেতে চান না বা পছন্দ করেন না। তিতা হলেও করলার রয়েছে নানা গুনাগণ। তাই আজকের আর্টিকেলটি করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়েই লিখছি। যারা করলা খেতে পছন্দ করেন না আশা করি আজকের পোস্টটি পড়ার পর তারাও করলা খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
করলা বিভিন্ন ধরনের রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। করলায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান, যেমনঃ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক ইত্যাদি।
করলার উপকারিতা
করলা ভাজি, ভর্তা বা মাছের তরকারিতে যেকোনভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। এটি মানুষের হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণেও করলার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যাদের ডায়বেটিসের সমস্যা আছে তারা মাঝে মাঝে করলার জুস করে খেতে পারেন। করলা শরীরের কোলেস্টেরল বা চর্বি কমাতেও সাহায্য করে।
তারপর মধুর সাথে করলার রস মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থেকেও উপকার পাওয়া যায়। করলার রস ওজন কমাতে সাহায্য করে। লিভারের সমস্যা নিরাময়েও করলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। করলায় প্রচুর পরিমাণ ফাইবার রয়েছে যা গ্যাস্ট্রিকের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া করলা হাই ব্লাড প্রেশার কমাতে সাহায্য করে।
রোগ নিরাময়ে করলার কার্যকারিতা
বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে করলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় করলা রাখা উচিত। করলার রয়েছে নানা ঔষধি গুনাগুণ যার কারণে করলা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। নিম্নে করলার আরও কিছু গুনাগুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
ত্বক, চুল এবং দাঁতের সৌন্দর্যেঃ করলার জুস ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। করলায় থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি ত্বকের বলিরেখা দূর করে, ত্বককে আরও উজ্জীবিত করে। ত্বকের সমস্যা রোধ করতে এবং ত্বককে ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাকের সঙ্ক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণঃ করলার রস রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই যাদের ডায়বেটিসের সমস্যা আছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে করলার রস খেতে পারেন।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ করলাতে রয়েছে পটাশিয়াম যা রক্তের চাপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এছাড়া মস্তিষ্ক এবং হার্টের স্নায়ুকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে করলা।
হজমশক্তি বৃদ্ধিঃ করলা হজমশক্তি বৃদ্ধি করার মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। নিয়মিত করলা খেলে আপনার পরিপাকতন্ত্রের কোন সমস্যা থাকলে তা অনেকটা দূর হবে। তাই দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় করলা রাখুন।
ক্যান্সার প্রতিরোধঃ করলা তিতা স্বাদযুক্ত একটি সবজি। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধকারী লাইকোপিন পুষ্টি উপাদান। করলাতে রোগ প্রতিরোধকারী লুটিনও রয়েছে।
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধঃ করলা রক্তের চর্বি ট্রাইগ্লিসারাইড বা টিজি কমায় আর রক্তের উচ্চচাপ কমায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় করলা থাকলে তা শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে একইসাথে রক্তনালিতে চর্বি জমা রোধ করে হার্টকে ভালো রাখে।
এছাড়া শ্বাসরোধে, ফুস্ফুসের ব্রংকাইটিস, বাতের ব্যাথা নিরাময়ে করলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। লিভারে জমে থাকা টক্সিন অপসারণে করলার রস খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। তাই করলার এত এত উপকারিতার জন্য এক্টু তিতা হলেও এটি খাওয়ার অভ্যাস আপনাকে নানা রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে।
করলার অপকারিতা
যেকোন খাবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে, করলাও এর ব্যতিক্রম নয়। নিম্নে করলার কিছু অপকারী দিক তুলে ধরা হলোঃ
- করলার রস বেশি খেলে পেট খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমনঃ ডায়রিয়া, পেট ব্যাথা ইত্যাদি।
- ডায়বেটিসে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি করলার রস খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিবেন।
- গর্ভবতী নারীদের জন্য করলা খাওয়া কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ কারণ এতে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। তাই গর্ভবতী নারীদের অত্যধিক করলা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
- কারো হার্টের সমস্যা থাকলে করলা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
- এছাড়া করলা ভাজি, ভর্তা বা তরকারি খাওয়ার পর দুধ, দই, আম ইত্যাদি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ এতে বুক জ্বালাপোড়া করা বা এসিডিটি বেড়ে যেতে পারে।
স্বাস্থ্যের জন্য করলার অপকারিতার চেয়ে উপকারিতাই বেশি। তাই কিছু বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া করলা খাওয়ায় তেমন কোন ঝুঁকি নেই। তাই খাদ্যতালিকায় নিয়মিত করলা রাখুন।