পেয়ারা আমাদের দেশীয় ফল, এটি প্রায় সারাবছরই পাওয়া যায়। নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই ফলটি। পেয়ারা দেশীয় ফল হওয়ায় এটি দামেও কম এবং সহজলভ্য। অন্যান্য ফলের তুলনায় পেয়ারার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি।
পেয়ারার মূল পুষ্টি উপাদান হলো ভিটামিন সি যেটি পেয়ারা ছাড়া শুধুমাত্র আমলকীতে পাওয়া যায়। পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা পেয়ারার অনেক উপকারিতা ও অপকারিতার কথা ব্যক্ত করেছেন। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা পেয়ারার উপকারিতা, অপকারিতা ও পুষ্টি গুনাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
পেয়ারার উপকারিতা
পেয়ারাতে রয়েছে ভিটামিন সি, যা দাঁতের মাড়িকে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। পেয়ারায় কিছু পলিফেনল রয়েছে যা এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় যা হার্টের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। পেয়ারা শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
এছড়া পেয়ারার পাতায় রয়েছে এন্টি-ব্যাক্টেরিয়াল গুণ যা দাঁতের মাড়ির ব্যাথা উপশম করতে সাহায্য করে। পেয়ারায় আরও রয়েছে ভিটামিন বি৩ এবং বি৬ যা ব্রেইনের রক্ত সঞ্চালনকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। পেয়ারা শরীরের ওজন কমাতেও সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও পেয়ারার ভূমিকা রয়েছে।
যেসব রোগের জন্য পেয়ারা উপকারি
পেয়ারা স্বাস্থ্যের জন্য একটি উপকারী ফল। পেয়ারা খেলে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় থাকে। নিম্নে যেসব রোগ প্রতিরোধে পেয়ারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা লিখা হলোঃ
ডায়বেটিস প্রতিরোধে
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে পেয়ারা খুবই কার্যকরী একটি ফল। পেয়ারার রসে থাকা মেলিটাস ডায়বেটিস এর চিকিৎসায় কার্যকর। তাই ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত একটি করে পেয়ারা খাওয়া উচিত।
ক্যান্সার প্রতিরোধে
ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে পেয়ারা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম। পেয়ারায় রয়েছে লাইকোপেন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
পেয়ারাতে রয়েছে পটাশিয়াম যা রক্তের চাপকে কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত পেয়ারা খেলে রক্তের চাপ ও রক্তের লিপিড কমে যায়। লাইকোপিনসমৃদ্ধ গোলাপি পেয়ারা খেলে আপনার হার্টের সমস্যা থেকেও চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেন।
দৃষ্টিশক্তি প্রতিরোধে
কাঁচা পেয়ারায় ভিটামিন-এ থাকে। ভিটামিন-এ চোখের রাতকানা রোগ সারতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি করে পেয়ারা রাখুন।
পেটের সমস্যায়
পেটে কোন ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হলে পেয়ারাতে থাকা এন্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান ব্যাক্টেরিয়াকে ধ্বংস করে ব্যাথার উপশম ঘটায়। এছাড়া পেয়ারায় গ্লুকোজের পরিমাণ কম থাকাতে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
ত্বক ও চুলের পরিচর্যায়
পেয়ারা ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকে। ত্বকের আদ্রতা রক্ষা করে এবং পায়ের গোড়ালি ফাটা কমায়।
পেয়ারার অপকারিতা
যেকোন খাবারই অতিরিক্ত খেলে তা শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ঠিক তেমনিই প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকায় বেশি পেয়ারা খেলে আপনার হজমে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। গর্ভবতী নারীদের জন্য পেয়ারা খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ কারণ এতে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। যাদের ঠান্ডার সমস্যা রয়েছে তাদের জন্যও প্রয়োজনের অধিক পেয়ারা খাওয়া ঠিক নয়। যেকোন পেটের সমস্যায় যেমনঃ ডায়রিয়া, আমাশয় ইত্যাদি হলে পেয়ারা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। পেয়ারা পাতার রস বেশি খেলে মাথা ব্যাথা, কিডনির সমস্যা হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত পেয়ারা খেলে পেট ফেঁপে থাকে এবং গ্যাস্ট্রিকের প্রবলেম হতে পারে।
পেয়ারা চাষ করার উপযুক্ত সময়
শীত বা গ্রীষ্ম যেকোন অঞ্চলেই পেয়ারা ভালো জন্মে। পেয়ারা অন্যান্য ফসলের চেয়ে কম পানিতে বেঁড়ে উঠতে সক্ষম। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে অর্থাৎ বর্ষার শুরুতে পেয়ারার বীজ বা গুটিকলমের চারা বপণ করা যায়। ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যেই গাছে ফুল ধরে ফল জন্মায়। বছরে দুই বার গাছে ফুল ধরে সেটি হচ্ছে বর্ষাকাল ও বসন্তকাল। বসন্তকালে যে মুকুল ধরে তার ফল হয় বর্ষায় আর বর্ষাকালে যে মুকুল হয় সেটির ফল ধরে শীতকালে। শীতকালের পেয়ারার স্বাদ অনেক বেশি। শীতের পেয়ারাগুলো আকারে বড় হয় এবং মিষ্টি ও রসালো হয়।