প্রকৃতিতে রয়েছে নানা ধরনের ভেষজ গাছপালা যার মধ্যে নিম গাছ অন্যতম। নিম গাছ একটি ওষুধি গাছ। দৈনন্দিন জীবনের নানা ধরনের কাজে লাগে এই নিম গাছ। গ্রামে গেলে দেখা যায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই নিম গাছ আছে। শহরেও অনেকে বাড়ির পাশে প্রকৃতির শোভাবর্ধনকারী এই নিম গাছ লাগিয়ে থাকেন।
নিম গাছের পাতা, ডাল সব কিছুই মানুষের উপকারে আসে। নিম মানুষকে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকেও রক্ষা করে। এটি প্রাকৃতিক ব্যাথা ও জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নিম গাছের গুনাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
নিম পাতার উপকারিতা
নিম পাতার রয়েছে নানা ধরনের ঔষধি গুনাগুন। নিম মুখের ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। খাবার হজম করতে সাহায্য করে। নিম পাতার ট্যাবলেট, গুঁড়া, রস, নিম পাতা সিদ্ধ পানি যেকোন ভাবেই ব্যবহার করা যায়। নিয়মিত নিমের পাতা ভেজে খেলে আপনি স্বাস্থ্যের ভালো সুফল পাবেন।
নিম পাতা শারীরিক ক্লান্তি দূর করে, বুকে কফ জমলে তা সাড়তে সাহায্য করে। তারপর ত্বকের কোন ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে, কৃমির সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে, মূত্রনালির সংক্রমণ কমাতে নিম পাতা ভালো উপকারে আসে। বমি বমি ভাব কমায় এবং বমি করার প্রবণতা কমায়।
ত্বকে এন্টি এজিং সিস্টেম গড়ে তোলার মাধ্যমে নিম পাতা ত্বককে পুনরায় জীবিত করে তুলতেও ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে চুল ও ত্বকের যত্নে নিম পাতা বেশ কার্যকরী।
রোগ নিরাময়ে নিমের কার্যকারিতা
বহু রোগের আয়ুর্বেদিক ঔষধ এই নিম গাছের পাতা থেকে তৈরি হয়। বিশেষ করে ত্বকের যেকোন রোগের ক্ষেত্রে নিমের ভূমিকা অপরিসীম। নিম্নে নিমের কিছু উল্লেখযোগ্য কার্যকারিতা উল্লেখ করা হলোঃ
- ত্বকঃ ত্বকের যেকোন সমস্যার ক্ষেত্রে মানুষের মাথায় সর্বপ্রথম নিম পাতার কথা মনে পড়ে। নিম পাতার রস ত্বকের যেকোন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ত্বকের দাগ, ব্রণ, চুলকানি, খোসপাঁচড়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। নিম পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে খোসপাঁচড়া ভালো হয়। তারপর নিম পাতা বেটে তার সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বকের দাগ, ব্রণ দূর হয়। তবে সেটি নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। কারণ প্রাকৃতিকভাবে কোন সমস্যা নিরাময়ের ক্ষেত্রে সময় একটু বেশি লাগে।
- চুলঃ খুশকি, উকুন, বা মাথার ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে নিম পাতা বেটে মাথায় দিলে সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। উকুন দূর করার জন্য ৩/৪ দিন টানা নিম পেতে বেটে ১ ঘণ্টার মত মাথায় দিয়ে তারপর ধুয়ে ফেলুন। খুশকি দূর করার জন্য নিম পাতা সিদ্ধ পানি শ্যাম্পুর সাথে মিশিয়ে চুলে ম্যাসেজ করে ধুয়ে ফেললেই খুশকি দূর হয়ে যাবে। সপ্তাহে একদিন নিম পাতা বেটে চুলে দিলে চুল ঝলমলে, উজ্জ্বল এবং সুন্দর হয়।
- কৃমিনাশকঃ শিশুরা কৃমি রোগে আক্রান্ত হলে পেট বড় হয়, চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কৃমি নির্মূল করতে নিম পাতার রস খুবই কার্যকারী।
- দাঁত ব্যাথায়ঃ দাঁতের মাড়ি মজবুত ও শক্তিশালী রাখার জন্য নিমের ডাল দিয়ে নিয়মিত মেসওয়াক করার প্রচলন সেই আদিকাল থেকে। তারপর নিম পাতার নির্যাস জলে মিশিয়ে ব্যবহার করলে দাঁতের আক্রমণ, দাঁতের পচন এবং মাড়ির ব্যাথা কমে যায়।
- ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনেঃ নিম ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে অনেক ভালো কাজ করে। রক্তনালিকে প্রসারিত করে রক্ত সংবহন উন্নত করে। তাই কারো ডায়বেটিসের সমস্যা থাকলে সে নিয়মিত সামান্য পরিমাণ নিম পাতার রস খেলে উপকার পাবেন। রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
- বুকের কফজনিত সমস্যা দূর করেঃ বুকে কফ জমলে তা উপশম করার জন্য নিম পাতার রস পানিতে মিশিয়ে খেলে উপকার হয়।
এছাড়া জন্ডিস, পোকামাকড়ের কামড়, ওজন কমানো, ছত্রাক, পেটের পীড়াজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
নিম গাছের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী
নিম একটি বহুবর্ষজীবী গাছ এটি আকৃতি ও কাঠামোগত দিক থেকেও অনেক বড় হয়। নিমগাছ প্রায় ৪০-৫০ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয় আর কান্ডের প্রস্থ প্রায় ২০ থেকে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। নিম গাছের পাতা দেখতে খুবই সুন্দর। পাতার কিনারাগুলো কেমন খাঁজ কাটা টাইপের। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে নিম গাছ ভালো জন্মে।
পরিণত নিম গাছের কাঠ থেকে আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। এছাড়া আদিকাল থেকে এই গাছের কাঠ বাদ্যযন্ত্র বানানোর কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়া ঘরের নানা সামগ্রী তৈরির ক্ষেত্রে এই কাঠ ব্যবহৃত হয় কারণ সহজে এই কাঠে ঘুণ ধরে না কোন পোকামাকড়ের ক্ষতি করা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।
নিম গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়
গ্রীষ্ম-বর্ষাকাল নিম গাছ লাগানোর জন্য উপযুক্ত সময়। নিম গাছের বীজ সরাসরি মাটিতে, টবে লাগানো যায়। নিম গাছের সবচেয়ে বড় সুবিধাটা হচ্ছে এটি যেকোন মাটিতেই লাগানো যায়। তাই আপনি এপ্রিল থেকে জুন-জুলাই মাস পর্যন্ত নিম গাছ লাগাতে পারেন।
নিম পাতার অপকারিতা
অনেক অনেক উপকারিতার পাশাপাশি নিমের কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যাদের কিডনী ও লিভারের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য নিম পাতা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার না করাই ভালো। তারপর নিম পাতা ব্যবহারের ফলে যদি ত্বকে কোন অ্যালার্জির প্রবলেম দেখা দেয় তাহলে নিম পাতা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভবতী নারীদের জন্য নিম পাতা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই গর্ভবতী নারীরা নিম পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।