প্রতারণা আমাদের সমাজের একটি নিত্যদিনের ঘটনা। প্রতিদিন হাজারো মানুষ নানাভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এই সমস্যাটি যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। থানায় প্রতারণার মামলা সংখাও বাড়ছে। তাই প্রতারণার শিকার হলে আপনার করনীয় কি, কীভাবে মামলা বা অভিযোগ করবেন এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করব।
প্রতারিত হলে আমরা সর্বপ্রথম পুলিশের নিকট যাই। আমাদের সমস্যার কথা আলোচনা করে তারপর মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে অনেকেই জানে না যে প্রতারণার ফাঁদে পড়লে কি করতে হয়, কীভাবে থানায় গিয়ে মামলা করতে হয় ইত্যাদি।
তাই প্রতারণা মামলা করার নিয়ম জানতে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
প্রতারণা কি
প্রতারণার হচ্ছে একজন ব্যক্তি অন্যায়ভাবে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে কিংবা বিশ্বাস ভঙ্গ করে তার অর্থ-সম্পদ লুট করে নেওয়া। যদি কোন ব্যক্তি অসদুপায় অবলম্বন করে অন্য ব্যক্তির ব্যক্তিগত কোন সম্পদ চুরি, ডাকাতি, অবৈধভাবে সম্পত্তি লিখে নেওয়া ইত্যাদি কাজ করে তাহলে সে প্রতারণা করার জন্য যথোপযুক্ত শাস্তি পাবে।
প্রতারণা মামলা করার নিয়ম
প্রতারণা মামলা দায়ের করার জন্য কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। প্রথমে সেই নিয়মগুলো সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। নিম্নে মামলা দায়ের করার নিয়মগুলো উল্লেখ করা হলোঃ
১। প্রমাণ সংগ্রহঃ প্রথমে আপনাকে উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। যেমনঃ ম্যাসেজ, ইমেইল, নথি, ছবি ইত্যাদি।
২। আইনি পরামর্শ গ্রহণঃ আপনার যেই অভিযোগ রয়েছে সেই বিষয়ে কোন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিবেন। অথবা নিকটস্থ থানার কোন পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
৩। আদালতে মামলা দায়ের করাঃ অভিযোগের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, তথ্য সাথে নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করুন।
প্রতারণা মামলা দায়েরের পদ্ধতি
ধাপ-১ঃ প্রমাণ ও তথ্য সংগ্রহ করা
প্রথমে প্রতারণার শিকার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রমাণ হিসেবে যেই তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে হবে তা হলোঃ
- প্রতারণার সাথে জড়িত ব্যক্তির নাম, ঠিকানা ও পরিচয়।
- প্রতারণার সময়, স্থান এবং পরিস্থিতি উল্লেখ করতে হবে।
- চুক্তি, ইমেইল, ম্যাসেজ, নথি এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি থাকলে তা জমা দিতে হবে।
ধাপ-২ঃ জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করা
প্রমাণ সংগ্রহ করার পর নিকটস্থ থানায় গিয়ে জিডি করে রাখবেন। তাহলে আপনার প্রতারিত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ অবগত হতে পারবে এবং জিডির সাথে সংযুক্ত প্রমাণ যুক্ত করে দিবেন। তাহলে আপনার মামলার কার্যক্রম করতেও সুবিধা হবে।
ধাপ-৩ঃ লিখিত অভিযোগ দাখিল করা
থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পর আপনাকে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করতে হবে।
- যিনি অভিযোগ করবেন তার নাম, ঠিকানা এবং পরিচয় উল্লেখ করা।
- প্রতারণাকারী ব্যক্তি বা অভিযুক্ত ব্যাক্তির নাম, ঠিকানা, পরিচয় উল্লেখ করা।
- ঘটনার বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।
- উক্ত ঘটনার কোন সাক্ষী বা প্রত্যক্ষদর্শীর নাম, পরিচয় উল্লেখ করা।
- প্রতারণার মাধ্যমে হওয়া আর্থিক বা অন্যান্য ক্ষতির বিবরণ।
- প্রমাণ সমূহের তালিকা দিতে হবে।
প্রতারণা মামলার শাস্তি
বাংলাদেশের দন্ডবিধি ৪০৬ এবং ৪২০ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যাক্তির অপরাধ আদালতে প্রমানিত হলে তার সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদন্ড এবং নগদ অর্থ জরিমানা করা হবে। এছাড়া অপরাধের ধরণের উপর ভিত্তি করে শাস্তি কম-বেশি হতে পারে।
প্রতারণা মামলা একটি জটিল এবং সংবেদনশীল প্রক্রিয়া। এটি যথাযথভাবে আইনি পদক্ষেপ, উপযুক্ত প্রমাণ এবং সচেতনতার সাথে সম্পন্ন করতে হয়। তাহলেই আপনি সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার পাওয়ার আশা করতে পারেন। সমাজের মানুষের মধ্যে আইন-কানুন, সঠিক পরামর্শ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে যেকোন ধরনের প্রতারণা মোকাবেলা করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
প্রতারণা প্রতিরোধে করণীয়
প্রতারণা একটি অত্যন্ত ঘৃণ্য এবং গুরুতর অপরাধ। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বপ্রথম সমাজের মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। প্রতারণা প্রতিরোধে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবেঃ
- সমাজের মানুষদের প্রতারণা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া।
- প্রতারণা করলে এর জন্য কীরূপ শাস্তি পেতে হবে তা জানানো।
- পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরে ধর্মীয় মূল্যবোধ, ন্যায়নীতি সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া যাতে প্রতারণার মত ঘৃণ্য অপরাধ থেকে সবাই বিরত থাকে।
- আইনি সহায়তা গ্রহণ করা।
সাধারন জিজ্ঞাসা
১। প্রতারণা মামলা দায়ের করতে কতো সময় লাগে?
উঃ প্রতারণা মামলা দায়ের হতে কি পরিমাণ সময় লাগতে পারে তা আপনার মামলার জটিলতা এবং প্রমাণ সংগহের উপর নির্ভর করে।