বাংলাদেশে অনেক গুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এবং এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের সীতাকুণ্ড উপজেলা অন্যতম। চট্টগ্রাম এর উপজেলাগুলোর মধ্যে সৌন্দর্যের দিক থেকে সীতাকুণ্ড সবচেয়ে এগিয়ে। সীতাকুণ্ড এর অপরূপ সৌন্দর্যের বেষ্টনী নিয়ে প্রায় ২৩৪ বর্গ কিমি জায়গা জুড়ে রয়েছে। সীতাকুণ্ডের দর্শনীয় স্থানগুলোর মাঝে মহামায়া লেক, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, ঝরঝরি ঝর্ণা ট্রেইল, সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক, কুমিরা ঘাট, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত, কমলদহ ঝর্ণা ট্রেইল এবং চন্দ্রনাথ পাহাড় অন্যতম।
ভ্রমণ প্রেমীদের জন্য সীতাকুণ্ড যেন মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এক টুকরো সবুজ ভূখণ্ড। সীতাকুণ্ডের পাহাড়, ঝরনা, নদী, চারিদিকের সবুজ গাছপালা, তৃণলতা
সব মিলিয়ে পর্যটকদের হৃদয় জুড়ানোর জন্য প্রকৃতি যেন তার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে।
সীতাকুণ্ড যেভাবে যাবেন
কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে রাত সাড়ে দশটায় মেইল ট্রেনে করে মাত্র ১০০ টাকায় সীতাকুন্ডে যেতে পারবেন। সকাল ৭ টার দিকে মেইল ট্রেনটি আপনাকে সীতাকুন্ড রেল স্টেশনে নামিয়ে দিবে। তাছাড়া সায়দাবাদ অথবা যাত্রাবাড়ি থেকে অনেক বাস পাবেন যেগুলো আপনাকে সীতাকুন্ড পৌঁছে দিবে।
সীতাকুণ্ডের দর্শনীয় স্থানগুলো
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় গন্তব্য। এখানে রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চন্দ্রনাথ পাহাড়, সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, ঝরঝরি ঝরনা ট্রেইল, কমলদহ ঝরনা ট্রেইল ইত্যাদি।
চন্দ্রনাথ পাহাড়
দর্শনার্থীদের কাছে হাইকিং এর জন্য এই পাহাড়টি অন্যতম জনপ্রিয়। পাহাড়টির আনুমানিক উচ্চতা ১০২০ ফুট। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠার জন্য ২টি রাস্তা আছে, একটি ডানদিকে আরেকটি বামদিকে। ডানদিকের রাস্তাটি সিঁড়ি দিয়ে উঠার জন্য আর বামের রাস্তাটি সম্পূর্ণ পাহাড়ি পথ, এই পথটি এডভেঞ্চারাস মানুষদের জন্য এক চমৎকার অভিজ্ঞতা।
পাহাড়ের চুড়া থেকে সমুদ্র দর্শনের এক অসাধারণ অনুভূতি উপলব্ধি করতে পারবেন পর্যটকরা। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান চন্দ্রনাথ মন্দির অবস্থিত। পাহাড়ে উঠতে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছানোর পর তার চারপাশের সবুজ প্রকৃতি মনকে স্নিগ্ধ ও সতেজ করে তুলে যা পাহাড়ে উঠার ক্লান্তি নিমিষেই দূর করে দেয়।
কিভাবে যাবেন চন্দ্রনাথ পাহাড়
সীতাকুণ্ড সদর থেকে প্রায় ৪ কিমি দূরে চন্দ্রনাথ পাহাড় অবস্থিত। সীতাকুণ্ড উপজেলার সদর থেকে রিকশা অথবা আপনি চাইলে পায়ে হেঁটেও চন্দ্রনাথ পাহাড়ে আসতে পারেন।
সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক
বর্তমানে পর্যটনকারীদের অন্যতম প্রিয় স্থান এই ইকো পার্ক। পার্কটিতে রয়েছে সুপ্তধারা ও সহস্র ধারা নামে দুইটি মনোরম ঝর্ণা। এ পার্কের একটি বিশেষত্ব হলো এখানে রয়েছে নানা ধরনের বিরল প্রজাতির বৃক্ষ, যা দর্শনার্থীদের বৃক্ষ বিষয়ক জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে। অর্জুন, চাপালিশ, জারুল, তেলসুর সহ আরও অনেক ফুল, ফল ও ওষধি গাছ। এখানকার বোটানিক্যাল গার্ডেনে রয়েছে অর্কিড হাউস, যেখানে প্রায় ৫০ ধরনের চেয়েও বেশি প্রজাতির দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অর্কিড সংরক্ষিত আছে। পাহাড়, ঝরনা, বৃক্ষরাজি, বন্যপ্রাণী, পাখির কোলাহল পার্কটিকে আরও সুন্দর ও সমৃদ্ধ করেছে।
নিয়মতান্ত্রিকভাবে পাহাড় ও এর পাদদেশ অত্যন্ত সুন্দর ভাবে গড়ে তোলা পার্কে রয়েছে প্রাকৃতিক র্ঝনা। বিকেলবেলা সূর্য ডোবার সময় গোধূলির রক্তিম আলো ইকোপার্কটিকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। প্রকৃতির জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় এ পার্কটি বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে।
কিভাবে যাবেন ইকোপার্ক
সীতাকুণ্ড উপজেলা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১ কিমি. দক্ষিনে সীতাকুন্ড পৌরসভার মধ্যে ইকো পার্কটি অবস্থিত। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে প্রায় ২ কিমি দুরে ফকিরহাট বাজারে এসে সেখান থেকে হাইওয়ের পূর্বদিকে ১.৫ কিমি পথ পেরুলেই ইকোপার্ক এর অবস্থান।
আরও দেখুন
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত
চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত গুলিয়াখালী সি বিচ। এখানকার স্থানীয় মানুষদের কাছে এটি ‘মুরাদপুর সি’ বিচ নামে পরিচিত।
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে পুরো সমুদ্র সৈকতটি সবুজ ঘাসের গালিচা দিয়ে ঢাকা। সমুদ্রের তিন দিকে রয়েছে সবুজে ঘেরা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট আর অন্য দিকে রয়েছে বিশাল সমুদ্রের স্নিগ্ধতা। সমুদ্র সৈকতটির পাশে কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা খালগুলোর চারিদিকে দেখা যায় কেওড়া গাছের শ্বাসমূল। সমুদ্রের ঢেউ, স্নিগ্ধ বাতাস আর চারিপাশের গাছপালার সৌন্দর্য মানবমনে বয়ে আনে প্রশান্তি। অনেকটা নিরিবিলি সৈকতের অদুরে দেখা মিলে ছোট ছোট জাহাজ আর মাছ ধরার ট্রলার।
কিভাবে যাবেন গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত
সীতাকুণ্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালী সি বিচ এর দূরত্ব প্রায় ৫ কিমি। সিএনজি বা নিজেদের গাড়ি নিয়ে বিচে যাওয়া যায়। যাওয়ার পথে পর্যটকদের মাঝ রাস্তায় সিএনজি পরিবর্তন করতে হতে পারে কারন এক লাইনের সিএনজি অন্য লাইন দিয়ে যাওয়া নিষেধ।
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় জায়গা। ঝাউবন, খোলামেলা পরিবেশ, জেগে ওঠা সবুজ ঘাসের চর, পিকনিক স্পট, সব মিলিয়ে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষা করছে পর্যটনকারীদের জন্য। সি বিচের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক দৃশ্য হচ্ছে সেখানকার সূর্যাস্ত, সূর্যের রক্তিম আলোয় প্রকৃতি যেন এক অন্য রঙে নিজেকে সাজিয়ে তুলে। সমুদ্র সৈকতটিতে পর্যাটকদের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে একটি লোহার ব্রিজ। ব্রিজে দাঁড়িয়ে থেকে জোয়ারের স্রোতের আওয়াজ মনে অন্য রকম আনন্দের আবির্ভাব ঘটায়। ব্রিজটি সৈকত থেকে শুরু হয়ে সমুদ্রের মাঝ পর্যন্ত বিস্তৃত । এছাড়া সমুদ্রের ভিতর দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার পথ হেঁটে যাওয়া যায়, যা দর্শনার্থীদের জন্য অত্যন্ত রোমাঞ্চকর।
কিভাবে যাবেন বাঁশবাড়িয়া সুমুদ্র সৈকত
সীতাকুণ্ড বাঁশবাড়িয়া বাজার থেকে প্রায় ২.৫ কিমি পশ্চিমে বাঁশ বাড়িয়া সি বিচ অবস্থিত। বাজার থেকে সিএনজি অথবা বাসে করে বিচে যাওয়া যায়।
ভাটিয়ারী লেক
চট্টগ্রাম সিটি থেকে ২০ মিনিটের দুরত্তে অবস্থিত এই ভাটিয়ারী লেক।সীতাকুণ্ডের অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে ভাটিয়ারী লেক অন্যতম। ভাটিয়ারী পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে অসাধারন এক নৈস্বর্গিক লেক। আঁকাবাঁকা পাহাড়ের পাহাড়ি পাদদেশে জমে থাকা পানি থেকে এই লেকের উৎপত্তি।
পাহাড়ের মাঝে নানা প্রজাতির পাখির কলরব আর ছোটাছুটি দৃষ্টি নন্দনীয়। ভাটিয়ারী সানসেট পয়েন্টে সূর্যাস্তের দৃশ্য খুবই সুন্দর। সূর্যের সোনালি আলো যখন লেকের জলে প্রতিফলিত হয় ঠিক চকচকে সোনার মতন দেখায়। এছাড়া লেকের পাশে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত একটি গলফ ক্লাব রয়েছে। পর্যটকরা চাইলে অনুমুতি নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন গলফ ক্লাবটি। বর্ষাকালে এই লেকের সৌন্দর্য আর কয়েকগুন বৃদ্ধি পায় বলে মনে হয়।
কিভাবে যাবেন ভাটিয়ারী লেক
চট্টগ্রাম সদর গেট থেকে বা সীতাকুণ্ড উপজেলা থেকে বাস, গাড়ি কিংবা সিএনজি নিয়ে ভাটিয়ারী বাস স্ট্যান্ডে যেতে হবে। তারপর বাসে করে ২ কিলোমিটার উত্তরে পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে গেলেই পৌঁছে যাবেন ভাটিয়ারী লেকে।
ঝরঝরি ঝর্ণা ট্রেইল
ঝরঝরি ট্রেইল সীতাকুণ্ড উপুজেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম এডভেঞ্চারাস একটি ট্রেইল। চারিদিকে সবুজ পাহাড়ে ঘেরা শান্ত-শীতল পথ দিয়ে ২ ঘণ্টার মত পথ পাড়ি দিতে হয়। ঝরনার কাছে পৌঁছানোর পর নিমিষেই যেন সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। ঝর্নার পাশ দিয়ে পাহাড় বেয়ে উপরে উঠার পর আরও কয়েকটি ঝর্ণা আর ক্যাসকেড দেখা মিলে যা পর্যটকদের মনকে মুগ্ধ করে। এছাড়া স্বর্গের সিঁড়ি নামক একটি ক্যাসকেড রয়েছে যেটি অসম্ভব সুন্দর দেখতে। অনেকটা খাঁজকাটা সিঁড়ির মতন। ট্রেইলের শেষে রয়েছে মুক্তি ঝর্ণা নামে আরও একটি আকর্ষণীয় ক্যাসকেড। সব মিলিয়ে ট্রেইলটি অসাধারণ অনুভূতির স্মৃতি ধারণ করে।
কিভাবে যাবেন ঝরঝরি ঝর্ণা
সীতাকুণ্ড উপজেলার পন্থিছিলা বাজার থেকে যাওয়া যায় ঝরঝরি ঝর্ণা। পন্থিছিলা বাজার থেকে ঝরঝরি ঝর্ণা যেতে প্রায় ১ ঘণ্টা সময় লাগে। আর পুরো ট্রেইল শেষ হতে ৫-৬ ঘণ্টার মত সময় লাগতে পারে।
কমলদহ ট্রেইল
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড রেঞ্জকে বলা যায় ঝর্ণা উপত্যকা। এখানে রয়েছে ছোট, বড় অসংখ্য ঝরনা, ঝিরি ক্যাসকেড ও ট্রেইল। তার মধ্যে এই ট্রেইলটি মোটামুটি সহজ। তাই এডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে এই ট্রেইলটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। কমলদেহ ট্রেইলে আরও কয়েকটি ঝর্ণা আছে। ট্রেইলের প্রথম ঝর্ণাটির নাম রূপসী। ঝর্নার উপরে কিছুদুর গেলেই দেখা যায় ট্রেইলটি ডান ও বামে দুইটি ভাগ হয়ে গেছে। পথে রয়েছে ছোট মাঝারি ঝর্ণা।
কিভাবে যাবেন কমলদহ ট্রেইল
কমলদেহ ঝর্ণা যাওয়ার জন্য সীতাকুণ্ড উপজেলার বড় দারগাহাট বাজারে যেতে হবে। বড় দারোগার হাট থেকে একটু সামনে গিয়ে ডান দিকে রয়েছে একটি ইটভাটা। আরা ইটভাটার পাশের রাস্তা ধরে কিছুক্ষন হেঁটে রেললাইন পার হলেই এই ট্রেইলের শুরু।