টিন সার্টিফিকেট একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কাগজ যার মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশে করদাতাদের শনাক্ত করে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক এবং উপার্জন সক্ষম প্রতিটি নাগরিকের টিন সার্টিফিকেট থাকা প্রয়োজন। সরকারি বিভিন্ন কাজে টিন সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন হয়। তবে অনেকেই টিন সার্টিফিকেট এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এবং কিভাবে টিন সার্টিফিকেটের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে তা হয় জানে না।
তাই আজকের আর্টিকেলটি সে সকল ব্যক্তিদের জন্য যারা অনলাইনে ই-টিন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে চান কিন্তু নিয়মটি ঠিক মত জানেন না। আজকের এই পোস্টে আমি অনলাইনে টিন সার্টিফিকেটের জন্য কিভাবে আবেদন করতে হয়, টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজনীয়তা এবং সুবিধা, অসুবিধা সম্পর্কে জানাবো।
টিন সার্টিফিকেট (TIN Certificate) কি এবং কেন দরকার
TIN (টিন) Tax Identification Number সংক্ষিপ্ত রূপ। টিন হলো বাংলাদেশের আয়কর-দাতাদের শনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত একটি 12 digit এর ইউনিক নাম্বার কোড। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যখন একটি নির্দিষ্ট আয়ের সীমা অতিক্রম করে তখন তাদের আয় থেকে কর প্রদান করতে হয়। আর কর প্রদান করার জন্যই এই টিন নাম্বার এর প্রয়োজন। এছাড়া আরও কিছু ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো-
- আয়কর প্রদান করার জন্য।
- ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার জন্য।
- ব্যাংক আকাউন্টের লেনদেন এর ক্ষেত্রে।
- সরকারি চাকরির আবেদন করার ক্ষেত্রে ।
- ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন করার জন্য।
- জমি, ফ্ল্যাট, গাড়ি ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় করার সময়।
- বিদেশ থেকে কোন পণ্য আমদানি-রপ্তানি এবং বিদেশে টাকা লেনদেন করার ক্ষেত্রে।
উপরে উল্লেখিত কর্মক্ষেত্রগুলোতে টিন সার্টিফিকেট এর দরকার হয়। তাই আপনার যদি সীমিত পরিমাণ আয় থাকে তাহলে আপনিও টিন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে পারেন।
টিন সার্টিফিকেট করতে কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন?
TIN Certificate এর আবেদন করতে কিছু দরকারি ডকুমেন্টস থাকা লাগবে। ডকুমেন্টস ছাড়া তো আর আবেদন করা সম্ভব হবে না তাই আগে থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো গুছিয়ে রাখবেন। তাহলে চলুন এবার টিন সার্টিফিকেট করতে কি কি কাগজপত্র লাগে তা জেনে নেয়া যাক।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
- পাসপোর্টের ফটোকপি ( যদি NID না থাকে )
- আপনার ফোন নাম্বার
- জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি
- পাসপোর্ট সাইজের দুইটি রঙ্গিন ছবি
- ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নিম্নক্ত কিছু কাগজ লাগবে
- ট্রেড লাইসেন্স ফটোকপি
- আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন এর ফটোকপি ( নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির জন্য )
- মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন এর ফটোকপি ( সোসাইটির জন্য )
ই-টিন (e-TIN) রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম
ধাপ-১ঃ ওয়েবসাইটে প্রবেশ
প্রথমে আপনাকে ই-টিন রেজিস্ট্রেশন করার জন্য বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট https://secure.incometax.gov.bd/TINHome এই সাইটে প্রবেশ করতে হবে । এরপর হোম পেইজ থেকে register অপশন-এ ক্লিক করুন।
ধাপ-২ঃ ইউজার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে আপনাকে একটি ইউজার আইডি তৈরি করতে হবে। ইউজার আইডি তৈরির জন্য আপনাকে কিছু ইনফরমেশন দিতে হবে। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুনঃ
- একটা ইউজার নেইম দিতে হবে যেমনঃ Lisa021। তারপর আপনাকে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে, এরপর পাসওয়ার্ডটি আবার রি-টাইপ করতে হবে অর্থাৎ পাসওয়ার্ডটি নিশ্চিত করনের জন্য পুনরায় পাসওয়ার্ডটি লিখতে হবে।
- একটি সিকিউরিটি কোয়েশ্চেনের উত্তর দিতে হবে। যেমনঃ what is your favourite color? অথবা অন্য যেকোন কোয়েশ্চেন আসতে পারে। সেই প্রশ্নের উত্তরটি লিখতে হবে।
- এরপর Country নির্বাচন করতে হবে।
- আপনার মোবাইল নাম্বার দিতে হবে।
- ই-মেইল থাকলে ইমেইল অ্যাড্রেসও দিতে পারেন।
- একটি ক্যাপচা পূরন করতে হবে।
সবকিছু পূরণ করার পর register অপশনে ক্লিক করবেন। এখন মোবাইল অ্যাক্টিভেশন ( Mobile Activation ) নামে একটি পেইজ দেখতে পাবেন। এখন আপনার মোবাইল sms-এ একটি activation code পাঠানো হবে। কোডটি e-Tin activation বক্সে কোডটি টাইপ করে active অপশনে ক্লিক করুন। তাহলেই আপনার ইউজার আইডি তৈরি হয়ে যাবে।
ধাপ-৩ঃ TIN Registration ( টিন রেজিস্ট্রেশন )
ইউজার আইডি রেজিস্টার করা সম্পন্ন হলে login করুন তারপর স্ক্রীনে registration/re-registration লেখা দেখতে পাবেন। এখন রেজিস্ট্রেশন অপশন ক্লিক করুন। এবার আরেকটি ফর্ম দেখতে পাবেন নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে ফর্মটি পূরন করুন।
- প্রথমে করদাতার ধরন ( Tax payer status ) নির্বাচন করতে হবে। প্রদত্ত অপশনগুলো থেকে individual-> Bangladesh resident নির্বাচন করুন।
- যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে তারা individual-> Bangladesh resident-> Having NID সিলেক্ট করতে হবে। আপনার যদি এনআইডি না থাকে তাহলে অন্য অপশন থেকে সিলেক্ট করবেন।
রেজিস্ট্রেশন এর ধরন নির্বাচন করুনঃ আপনি নতুন করদাতা হলে Registration আর আগে থেকে কর প্রদান করে আসছেন এমন হলে Re-registration অপশন নির্বাচন করুন।
- Purpose of TIN/ উদ্দেশ্যঃ আপনি কি উদ্দেশ্যে টিন আবেদন করতে চাচ্ছেন সেটি নির্বাচন করবেন। এখানে others অপশনটি নির্বাচন করাই ভালো।
- আপনার আয়ের প্রধান উৎস নির্বাচন করতে হবে। যেমনঃ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী ইত্যাদি।
- আপনি যেই পেশায় নিয়োজিত আছেন সেই কর্মস্থলের ঠিকানা বা Location নির্বাচন করতে হবে। যেমনঃ ঢাকা, বগুরা, বরিশাল ইত্যাদি।
- Type of employer/ Service location: এখানে আপনি কোন সেক্টরে জব করছেন সেটি সিলেক্ট করতে হবে। যেমনঃ ব্যাংক, financial institution, Bangladesh Biman ইত্যাদি।
সব তথ্য নির্বাচন করার পর Go to Next অপশনে ক্লিক করুন। এবার আপনি আরেকটি ফর্ম দেখতে পাবেন। এখানে আপনার ব্যক্তিগত কিছু ইনফরমেশন দিতে হবে।
যেমনঃ করদাতার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার, পিতা-মাতার নাম, মোবাইল নাম্বার, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি। এরপর আবার Go to Next অপশনে ক্লিক করুন। তারপর Final review নামে একটি পেইজ প্রদর্শিত হবে সেখানে সব তথ্য পুনরায় চেক করে দেখবেন যদি কোন ভুল থাকে সেগুলো Back to Previous অপশনে ক্লিক করে ঠিক করে নিবেন।
এরপর বক্সে একটি টিক চিহ্ন দিবেন এরপর Submit অপশনে ক্লিক করুন । তাহলে আপনি আপনার দেয়া সকল ইনফরমেশন আরেকবার দেখতে পাবেন। তারপর View certificate এবং পরবর্তী পেইজে Save certificate এ ক্লিক করলেই আপনার টিন সার্টিফিকেটটি ডাউনলোড হয়ে যাবে। এখন যেকোন সময় আপনি টিন সার্টিফিকেটটি প্রিন্ট করে ব্যবহার করতে পারবেন।
এভাবে আপনি ঘরে বসে মোবাইল অথবা কম্পিউটার দিয়ে অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হবেন।