ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ মানুষ বিদেশে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যাওয়ার জন্য আবেদন করে। কাজের জন্য বেশিরভাগ মানুষের প্রথম পছন্দ ইউরোপ। কারণ ইউরোপের দেশগুলোতে কাজের চাহিদা এবং বেতন তুলনামূলক বেশি। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, কাতার, ইরান এছাড়া মালেয়শিয়াতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

কেবল সৌদিতেই প্রায় ৪৫ লক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে আর মালেয়শিয়াতে রয়েছে ১২ লাখের কাছাকাছি বাংলাদেশি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। মধ্যপ্রাচ্যের বিকল্প হিসেবে এখন ইউরোপের শ্রম বাজারে বাংলাদেশী কর্মীদের সংখ্যা কীভাবে বাড়ানো যায় সেই পরিকল্পনা নিয়ে পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে।

আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের ইউরোপের যে দেশগুলোতে ওয়ার্ক পারমিট সহজে পাওয়া যায় তার মধ্যে কয়েকটি দেশ নিয়ে আলোচনা করব।

ইউরোপের যে দেশগুলোতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া যায়

নিচে কিছু দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে ইউরোপের এই দেশগুলো থেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া যাচ্ছে। যদিও সবসময় এই ভিসা পাওয়া যায় না, কিন্তু যখনই এই ভিসা গুলো ছাড়া হয় আমরা সাথে সাথেই আমাদের ওয়েবসাইটে জানিয়ে দিই।

তাই আমাদের এই ওয়েবসাইটটি আপনারা চাইলে বুকমার্ক করে রাখতে পারেন যেন আপনারা ভিসা ছাড়ার সাথে সাথেই আপডেটটি পান।

ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

দেখুনঃ ভিসা করতে কি কি লাগে

ইতালি

বাংলাদেশ থেকে বৈধ এবং অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দেশটিতে কাজের চাহিদা এবং বেতন বেশি হওয়াতে বাংলাদেশীদের মাঝে ইতালি যাওয়া আকাঙ্ক্ষা এবং প্রবণতা বেশি। 

তবে এই বছর ইতালি সরকার বাংলাদেশসহ আরও তিনটি দেশের ভিসা বাতিল করেছে। ভিসা বাতিল করার কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশীরা স্পন্সর ভিসায় ভুয়া অনুমতিপত্র নিয়ে অবৈধভাবে ইতালিতে প্রবেশ করে। সেজন্য এবার আইন প্রণয়ন করে ইতালি সরকার বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা নাগরিকদের ভিসা অনুমোদন বাতিল ঘোষণা করেছে। ২০২৪ সালের ১১ অক্টোবর দেশটির সরকার এই আইন প্রণয়ন করেন। এর জন্য দায়ী মূলত বাংলাদেশের দালাল চক্র। 

রোমানিয়া

গত বছর কাজের ভিসায় দক্ষিণ এশিয়া থেকে প্রায় ৪৩ হাজার অভিবাসী রোমানিয়ায় এসেছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিসা প্রাপ্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। 

পূর্ববর্তী বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় রোমানিয়ায় বাংলাদেশীদের আসার হার অনেক বেশি। বর্তমানে রোমানিয়াতে কাজের ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে রোমানিয়ান ভাষা শিখতে হবে। এছাড়া মিনিমাম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। আপনি যদি স্পন্সর ভিসায় যান সেক্ষেত্রে যাওয়া আরও সহজ হবে। ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় রোমানিয়া যেতে প্রায় ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়।

দেখুনঃ রোমানিয়া থেকে ইতালি যেভাবে যাবেন

জার্মানি

জার্মানি কাজের জন্য যেতে হলে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে স্পন্সর ভিসা। আপনি স্পন্সর ভিসায় বৈধভাবে কাজের জন্য জার্মানি যেতে পারবেন। প্রথমে আপনাকে জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার জন্য  প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে রাখতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসটি হলো জার্মানি ফেডারেল কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত কোন কোম্পনির জব অফার লেটার। 

এরপর আপনার ডকুমেন্টস দেখে যে কোম্পানির পছন্দ হবে তারা আপনাকে ইন্টার্ভিউ এর জন্য ডাকবে। সেখানে ইন্টার্ভিউ দেওয়ার পর আপনার পারফরম্যান্স যদি ভালো হয় তাহলে আপনি ওই কোম্পনি থেকে জব অফার লেটার পাবেন। উক্ত কোম্পানি আপনাকে স্পন্সর করবে এবং জব এগ্রিমেন্ট লেটার দিবে। তারপর সব তথ্য একত্রিত করে আপনাকে ভিসা আবেদন করতে হবে। 

জার্মানিতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে প্রায় ৮ থেকে ১২ লক্ষ টাকা লাগে।

ফ্রান্স

ফ্রান্সের অবস্থান ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে। উন্নত জীবনযাপনের পাশাপাশি শিক্ষা, চিকিৎসা রয়েছে ফ্রান্সে। স্টুডেন্ট ভিসা, টুরিস্ট ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য ফ্রান্স একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল। এদেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী। 

ফ্রান্সে কাজের জন্য ৪ ধরনের কাজের ভিসা রয়েছে। যথাঃ

  • স্বল্প মেয়াদী ( এই ভিসার মেয়াদ ৯০ দিন)
  • অস্থায়ী কাজের ভিসা ( এই ভিসার মেয়াদ ৬ মাস ১ বছর)
  • দীর্ঘ মেয়াদী ( এই ভিসার মেয়াদ ১ থেকে ৪ বছর )
  • ট্যালেন্ট ভিসা ( ব্যক্তির অর্জন, গবেষণাক্ষেত্রে এই ভিসা দেওয়া হয় )

ফ্রান্সে আপনি দুইভাবে  আসতে পারবেন। যথাঃ

  • সরকারিভাবে এবং
  • বেসরকারিভাবে

সরকারিভাবে ফ্রান্সে যেতে আপনার প্রায় ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকার মত লাগবে। বেসরকারিভাবে গেলে লাগবে ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। এছাড়া আপনি যদি কারো রেফারেন্সে আসতে পারেন সেক্ষেত্রে খরচ কিছুটা কম পড়বে। 

মালটা

পর্যটন, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের জন্য মালটা এখন বাংলাদেশীদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্যের স্থান।

মালটা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে প্রথমে আপনাকে মালটায় অবস্থানরত কোন নিয়োগকর্তার নিকট আবেদন করতে হবে। আবেদন প্রোসেসিং করার পর আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হবে। 

তারপর ওয়ার্ক পারমিটসহ  অন্যান্য সকল ডকুমেন্টস একত্রিত করে ভিসা আবেদন করতে হবে। 

ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করার আপনি ভিএফএস গ্লোবাল কিংবা যেকোন ভিসা এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন। 

আপনি যদি সরকারিভাবে মালটায় যান তাহলে আপনার খরচ পড়বে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা। বেসরকারিভাবে কোন এজেন্সির মাধ্যমে গেলে ৬ থেকে ৮ লক্ষ টাকা লাগবে। স্পন্সর ভিসায় গেলে খরচ কিছুটা কম লাগে। আপনি ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকায় স্পন্সর ভিসায় মালটায় যেতে পারবেন।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির হ্রাস এবং সেইসাথে দ্রব্যের মূল্যস্ফীতি ঘটার কারণে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যার কারণে মানুষ বিদেশে কাজের জন্য যাওয়ার চেষ্টা করেন।

তো আশা করছি আপনারা যে উদ্দেশ্যে এই পেজটি ভিজিট করেছেন সেই উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে। যদি হয়ে থাকে তাহলে এই পোস্টটি সবার মাঝে শেয়ার করে দিন এবং নিচে কমেন্টে আপনার মতামত জানান।

আরও পড়ুন

শেয়ার করুন

Leave a Comment