সাজেক ভ্যালি | Sajek Valley – ভ্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত

বর্তমানে ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের পছন্দের তালিকায় সাজেক অন্যতম। বিশেষ করে যারা পাহাড় প্রেমী তাদের সাজেক এর প্রতি ভালোলাগাটা যেন একটু বেশি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ স্থান হলো সাজেক ভ্যালি। এটি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাজেক ভ্যালির উচ্চতা প্রায় ১৮০০ ফুট। ভৌগলিক কারণে খাগড়াছড়ির  দীঘিনালা থেকে সাজেক যাতায়াত করা সহজ। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক ভ্যালির দূরত্ব ৭০ কিমি. আর দীঘিনালা থেকে  দূরত্ব ৪০ কি.মি.।

সাজেকে যাওয়ার উপযুক্ত সময়

বছর জুড়েই সাজেকে থাকে আবহাওয়ার ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেখা যায়।  ফলে বছরের যেকোন সময়ই সাজেকে বেরাতে যাওয়া যায়। তবে আগস্ট থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সাজেকে বেশি মেঘ দেখা যায় । তাই মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখার জন্য বছরের এই সময়টাই বেশি উপযুক্ত।

সাজেকে যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার জন্য অনেকগুলো পরিবহন রয়েছে। তাই প্রথমে আপনাকে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। আপনি সৌদিয়া, শ্যামলি, শান্তি পরিবহন, এস আলম, ঈগল ইত্যাদি  বাসে করে খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন। বাসের ভাড়া পরিবহন অনুযায়ী ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে ( এসি অথবা নন এসি ) । এসি বাসের মধ্যে রয়েছে বিআরটিসি ও সেন্টমার্টিন পরিবহন। আর বাসগুলো সাধারণত রাত ১০ টার ভিতরে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ঢাকায় গাবতলী, কলাবাগানসহ শহরের নানা জায়গায় এইসব পরিবহনের কাউন্টার রয়েছে। তবে আপনি চাইলে অনলাইনেও বাসের টিকিট কাটতে পারেন।

খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক প্রায় ৭০ কিমি দূরে অবস্থিত। খাগড়াছড়ি শহর থেকে শাপলা চত্বরের কাছ থেকে চাঁন্দের গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে সাজেক ভ্যালি যেতে পারবেন। যাওয়া আসা দুইদিন মিলে ভাড়া ৯০০০ থেকে ১০৫০০ টাকার মত লাগতে পারে। এক গাড়িতে ১২ থেকে ১৫ জন করে যেতে পারবে। লোকসংখ্যা কম হলে অন্য কোন পর্যটন করতে আসা ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করে গাড়ি ভাড়া করতে পারেন।

খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা পথেও সাজেক যাওয়া যায়। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালার দূরত্ব প্রায় ২০ কিমি। তবে দীঘিনালা দিয়ে যেতে হলে আপনাকে সকাল ৯-৯ঃ৩০ টার মধ্যে সেখানে থাকতে হবে। কারণ দীঘিনালা থেকে বাকিপথ সেনাবাহিনীর এসকোর্টে যেতে হবে নিরাপত্তার সার্থে। সকালে মিস করলে আবার দুপুর ২ঃ৩০ মিনিটে আরেকটি এসকোর্ট এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

সাজেকে যেয়ে যেখানে থাকবেন

সাজেকে থাকার জন্য প্রায় শতাধিক রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। আপনি আপনার সামর্থ্য ও পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো একটি বুকিং দিতে পারেন। তবে সাজেকে যাওয়ার ২/১ মাস আগে রিসোর্ট বুকিং করে রাখবেন। কিছু উল্লেখযোগ্য রিসোর্ট হলো- মেঘপুঞ্জি, মেঘ মাচাং, ম্যাডভ্যাঞ্চার, লুসাই কটেজ ইত্যাদি। প্রতিটি রিসোর্ট আর কটেজের পরিবেশ, থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী ভাড়া কম বা বেশি হয়ে থাকে। তবে ভালো রিসোর্টে থাকার জন্য আপনার মিনিমাম ৪০০০ – ৫০০০  টাকা পার ডে খরচ হতে পারে।

সাজেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

সাজেকের চারপাশের সারি সারি পাহাড় যেকোন পর্যটককেই মুগ্ধ করবে। যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ পাহাড়ের সারি আর সাদা সাদা মেঘের ভ্যালি প্রকৃতিকে এক অনন্য রূপ দান করেছে। সাজেক এমন একটি পর্যটন স্থান যেখানে প্রকৃতি একদিনে নানা রকম সাজে সজ্জিত হয়। দেখবেন কখনো খুব রৌদ্রতপ্ত গরম আবার হঠাৎ করে প্রকৃতি বৃষ্টিস্নাত হয়ে উঠে যা অসম্ভব সুন্দর এক পরিবেশ তৈরি করে। কখনো আবার নিমিষেই চারপাশ ঘন কুয়াশায় প্রকৃতিকে আচ্ছাদিত করে ফেলে। পাহাড়ের সারি, মেঘের উপত্যকা, ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃতির এই রূপ মানবমনকে উৎফুল্ল করে তোলে।

ভোরের অপার্থিব সূর্যোদয়, হাত বারানো দূরত্বে মেঘের ভেসে বেড়ানো, বিকেলে পাহাড়ের কোলে সূর্যাস্ত কিংবা সন্ধ্যার পর আকাশে কোটি তারার মেলা ঠিক এমনভাবেই প্রকৃতির নানা রুপের দেখা মেলে সাজেক ভ্যালিতে।

সাজেকে গেলে কোথায় কোথায় ঘুরবেন?

প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে পুরো সাজেক ভ্যালিটাই একটি অনন্য সুন্দর জায়গা। তবে সাজেকে কিছু বিশেষ জায়গা রয়েছে ঘুরার জন্য সেগুলো হলো- কংলাক পাহাড়, হ্যালিপ্যাড, রুইলুই পাড়া, রক গার্ডেন, লুসাই ভিলেজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এখানে কংলাক পাহাড় সাজেকের সবচেয়ে উঁচু স্থান।

কংলাক পাহাড় হচ্ছে সাজেকে আসা পর্যটনকারীদের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। সাজেক ভ্যালির শেষ গ্রামটি হচ্ছে কংলাক পাড়া। সেখানে লুসাই জনগোষ্ঠির লোক বসবাস করে। কংলাক পাড়া থেকে কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। সাজেকের পশিমে ছোট ছোট অনেকগুলো পাহাড়ের পর যে বিশাল পাহাড়টি দেখা যায় সেটি হলো লুসাই পাহাড়। লুসাই পাহাড় থেকে কর্ণফুলী নদীর সৃষ্টি। তারপর আপনি চাইলে রুইলুই পাড়া থেকে দুই ঘণ্টা ট্র্যাকিং করে কমলক ঝর্ণা দেখতে যেতে পারেন। এই ঝর্ণাটি অনেকের কাছে সিকাম তৈসা ঝর্ণা নামে পরিচিত। এছাড়া রুইলুই পাড়ায় মনোরোম পরিবেশনায় নানা রকমের পাহাড়ি খাবার এবং থাকার জন্য রয়েছে অভিনব জায়গার ব্যবস্থা।

এছাড়া সাজেকে রয়েছে দুইটি হ্যালিপ্যাড। হ্যালিপ্যাড থেকে সূর্যোদয় দেখার আনন্দটাই আলাদা। সূর্যোদয়ের সময় সূর্যের যে সোনালি আভা মেঘের উপর পরে সেটি একটি অসাধারণ দৃশ্যের তৈরি করে। বিকেলে গোধূলির সময়টা অসম্ভব সুন্দর। সন্ধ্যার পর আকাশে কোটি কোটি তারার মেলা, মেঘ না থাকলে দেখা যায় বহু মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের।

সাজেক নিয়ে সাধারন জিজ্ঞাসা

১। সাজেক যাওয়ার উপযুক্ত সময় কোনটি?

উঃ বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়টাকে সাজেকে যাওয়ার উপযুক্ত সময় বলে মনে করা হয়। ।

২। সেনাবাহিনীর এসকোর্ট কখন শুরু হয়?

উঃ দীঘিনালা থেকে সকাল ১০ টা এবং বিকাল ৩ টায় সেনাবাহিনীর এসকোর্ট শুরু হয়। সাজেক থেকেও একই সময় সেনাবাহিনীর এসকোর্ট বের হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো সেনাবাহিনীর এসকোর্ট ছাড়া আপনি সাজেকে যেতে পারবেন না। তাই ঠিক সময়ের মধ্যে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করবেন।

৩। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার কোন লোকাল পরিবহন আছে?

উঃ অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার কোন লোকাল পরিবহন নেই। আপনাকে জীপ, সিএনজি রিজার্ভ করে যেতে হবে।

৪। সাজেকে নিজের গাড়ি অথবা বাইক নিয়ে যাওয়া যায় কিনা?

উঃ হ্যাঁ, আপনি চাইলে নিজের গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে সাবধানতার গাড়ি চালাতে হবে এবং গাড়ি চালককে অভিজ্ঞ হতে হবে। কারণ পাহাড়ের রাস্তা বেশ উচুনিচু ও বিপজ্জনক। আর খাগড়াছড়িতে কোন ফিলিং স্টেশনও নেই।

আরও দেখুন

শেয়ার করুন

Leave a Comment