রোমানিয়া ভিসা ফর বাংলাদেশ

রোমানিয়া দক্ষিন-পূর্ব ইউরোপের একটি বৃহত্তম জনসংখ্যাবহুল দেশ। এটি একটি উচ্চমধ্য আয়ের দেশ হওয়ায় দেশটিতে ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। যার কারণে প্রতিবছর বহু বাংলাদেশি নাগরিক রোমানিয়ায় কাজের জন্য ভিসা আবেদন করে। 

শ্রমিকদের ভালো বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়। তবে ভিসার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এখন রোমানিয়া ভিসা পাওয়া বেশ কঠিন। কিন্তু আপনার কাগজপত্র সবকিছু ঠিক থাকলে, আবেদনের যোগ্যতা থাকলে ভিসা পেতে তেমন সমস্যা হবে না। আরেকটি দুঃখের বিষয় হলো বাংলাদেশে রোমানিয়ার কোন দূতাবাস নেই। রোমানিয়া যেতে হলে আপনাকে ভারত দূতাবাসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে রোমানিয়া ভিসা আবেদন করতে হবে।

তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো কীভাবে রোমানিয়া ভিসা আবেদন করতে হয়, কি কি কাগজপত্র লাগে, ভিসা আবেদন করতে কি যোগ্যতা লাগে, কোন ভিসার খরচ কত ইত্যাদি।

রোমানিয়া ভিসা আবেদন করার নিয়ম

গত কয়েক বছরে রোমানিয়া ভিসার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান সময়ে রোমানিয়া ভিসা পাওয়া একটু কঠিন। রোমানিয়া সরকার ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া আগের তুলনায় কিছুটা জটিল করেছে। তবে এতে টেনশন করার কিছু নেই। 

আপনি যদি নিয়ম অনুযায়ী ভিসা আবেদন করেন এবং কাগজপত্র সব ঠিক থাকে তাহলে আপনার ভিসা পেতে কোন সমস্যা হবে না। এখন আমরা অনলাইন থেকে রোমানিয়া ভিসা আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করা এবং আবেদন ফর্ম পূরণ করার নিয়ম বিস্তারিত জানবো। 

রোমানিয়া ভিসা আবেদন ফর্ম তিন ধরনের । যথাঃ

১। ডিপ্লোম্যাটিক ভিসা আবেদন

২। লং স্টে ভিসা আবেদন

৩। শর্ট স্টে ভিসা আবেদন


প্রথমে আপনাকে ভিসা ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে। আপনি কোন উদ্দেশ্যে যেতে চাচ্ছেন সেই অনুযায়ী আপনাকে ভিসা ফর্ম ডাউনলোড করতে হবে। ফর্ম pdf ফাইল আকারে দেওয়া থাকে এবং রোমানিয়া ভাষায় লেখা থাকে। তাই ফর্ম পূরণ করার ক্ষেত্রে আপনাকে পূর্বে রোমানিয়া ভিসা আবেদন ফর্ম পূরণ করেছে এমন কোন ব্যক্তির সাহায্য নিতে হবে অথবা কোন এজেন্সির মাধ্যমে ফর্ম পূরণ করতে হবে।

রোমানিয়া যেতে কি কি কাগজপত্র লাগে?

ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী ডকুমেন্টের ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য থাকে। আপনি কোন ভিসায় যাবেন সে ভিসার জন্য কি কি কাগজপত্র জমা দিতে হবে তা আগে থেকে ভালোমত জেনে নিতে হবে। তবে কিছু ডকুমেন্টস আপনি যেই ভিসাতেই যান না কেন আপনাকে জমা দিতেই হবে। নিচে রোমানিয়া ভিসা আবেদনের জন্য যা যা কাগজপত্র লাগবে তা উল্লেখ করা হলোঃ

  • একটি বৈধ পাসপোর্ট ( পাসপোর্টের মেয়াদ নূন্যতম ৬ মাস থাকতে হবে)
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটকপি
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
  • পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফর্ম
  • টিটিসি কর্তৃক কাজের দক্ষতা সার্টিফিকেট 
  • ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট ( IELTS, TOEFL)
  • আপনার সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি
  • মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
  • আপনার আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণস্বরূপ ব্যাংক স্ট্যাট্মেন্ট এর কপি লাগবে
  • ভ্রমণ বীমা ( টুরিস্ট ভিসার ক্ষেত্রে লাগবে)
  • রোমানিয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফার লেটার লাগবে ( স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে )
  • অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়ক কাগজপত্র

রোমানিয়া ভিসা আবেদন ফর্ম পূরণ করার নিয়ম

তথ্য প্রযুক্তির এই সময়ে আপনি ঘরে বসে অনলাইনে রোমানিয়া ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। সেজন্য আপনাকে রোমানিয়া ভিসা আবেদন ফর্মের ওয়েবসাইট https://mae.ro/en/node/2060 এই লিংকে প্রবেশ করতে হবে। এরপর নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুনঃ

  • ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর নিচের ছবির মত একটি পেইজ দেখতে পাবেন।
রোমানিয়া ভিসা ফর বাংলাদেশ

দেখবেন হোম পেইজের বামপাশে কতগুলো অপশন দেওয়া আছে সেখান থেকে আপনি Dreamed অপশনে ক্লিক করলে Visa application forms দেখতে পাবেন। এরপর আপনার ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভিসা ফর্ম ডাউনলোড করুন।

  • প্রয়োজনীয় সব তথ্য, কাগজপত্র সংগ্রহ করে রাখতে হবে। ভিসার ধরন অনুযায়ী ( ওয়ার্ক পারমিট/ স্টুডেন্ট/ টুরিস্ট ভিসা ) আপনাকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে হবে। 
  • ভিসা ফর্মটি অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে পূরণ করতে হবে। রোমানিয়াতে অবস্থান করছে আপনার এমন কোন আত্বীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব অথবা পরিচিত কেউ তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। আবার আপনি চাইলে কোন এজেন্সির সহায়তা নিতে পারেন।
  •  এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা আবেদন করলে আপনাকে সতর্কতার সাথে সব কাজ করতে হবে। কারণ বহু এজেন্সি আছে যারা মানুষকে জাল ভিসা দিয়ে প্রতারিত করে। তাই প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য আপনাকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।
  • সব কাগজপত্র সংগ্রহ করার পর এবং আবেদন ফর্ম সঠিকভাবে পূরণ করে রোমানিয়া দূতাবাসের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। সেটা অনলাইন বা অফলাইন দুইভাবেই করা যায়। ইন্টারভিউ যেন ভালো হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। অনেক ইন্টারভিউতে ভুল করার কারণেও ভিসা রিজেক্টেড (বাতিল) হয়।
  • ইন্টারভিউ দেওয়ার পর রোমানিয়া ভিসা কর্তৃপক্ষ আপনার সব ডকুমেন্টস, তথ্যাদি যাচাই করে দেখবে। রোমানিয়া অ্যাম্বাসি আপনার প্রদান করা ইনফরমেশনগুলো পর্যালোচনা করে আপনার ভিসা আবেদন গ্রহণ বা বাতিল করতে পারে।  ভিসা অনুমোদন পেতে প্রায় ৩ থেকে ৬ মাস সময় লাগতে পারে।

যে সকল কারণে রোমানিয়া ভিসা বাতিল হতে পারে

  • আপনার সাবমিট করা ডকুমেন্টে যদি তথ্যের কোন গরমিল থাকে তাহলে আপনার ভিসা বাতিল হতে পারে। যেমনঃ আপনার নাম, আপনার বাবা-মায়ের নামের বানান ঠিক আছে কিনা, পাসপোর্টের তথ্যের সাথে এনআইডি এর তথ্যের মিল আছে কিনা ইত্যাদি।
  • আপনি যে কাজের জন্য যাচ্ছেন ( হোটেলে ম্যানেজমেন্ট, প্লাম্বিং, ওয়েল্ডিং, কন্সট্রাক্টর ইত্যাদি) সেই কাজের সরকার অনুমোদিত (টিটিসি) দক্ষতার সার্টিফিকেট। অনেকে আছে ভুয়া সার্টিফিকেট জমা দেয় যার কারণে যখন আপনার তথ্য যাচাই করা হয় তখন সেটি ধরা পড়ে এবং ভিসা রিজেক্ট হয়।
  • অনেক সময় দেখা যায় এজেন্সির এজেন্ট ভুয়া কোম্পানির জব অফার সাবমিট করে। মানে কোম্পানি আছে কিন্তু ঠিকমত জব দিতে পারে না। সেক্ষেত্রে আপনার ভিসা রিজেক্ট হতে পারে।
  • সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি সেটি হলো ইন্টারভিউ। আপনার ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় যেই প্রশ্ন গুলো করবে সেগুলো ঠিকমত উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবেন। আপনার নাম কি , কোম্পানির নাম কি, আপনি কেন যাচ্ছেন, কোথায় থাকবেন ইত্যাদি প্রশ্ন করবে। ইন্টারভিউতে কোন ভুল তথ্য দিলে আপনার ভিসা বাতিল হতে পারে।

রোমানিয়া ভিসার খরচ কেমন

রোমানিয়া যাওয়ার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা রয়েছে। ভিসার ধরনের উপর নির্ভর করে ভিসা খরচ কেমন পড়বে। তাছাড়া আপনি সরকারিভাবে যাচ্ছেন নাকি বেসরকারিভবে সেটার উপরও ভিসা খরচ ডিপেন্ড করবে। 

সরকারিভাবে যেতে ভিসা খরচ তুলনামূলক কম লাগে। আর যদি কোন এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা আবেদন করেন সেক্ষেত্রে খরচ বেশি হবে। সরকারিভাবে যেতে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা লাগে। বেসরকারিভাবে গেলে ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।

রোমানিয়াতে যদি আপনার পরিচিত কোন ব্যক্তি বাঃ আত্বীয় থেকে থাকে তাহলে আপনি একটু কম খরচে ভিসা কিনতে পারবেন। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ রোমানিয়া কাজের ভিসার আবেদন করে থাকে। কাজের ভিসায় যেতে হলে আপনাকে অবশ্যই অনেক দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হতে হবে। এছাড়া আপনি স্টুডেন্ট ভিসা এবং টুরিস্ট ভিসায় যেতে পারবেন।

রোমানিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

আপনি যদি কাজের জন্য রোমানিয়া যেতে চান তাহলে আপনার রোমানিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে হবে। ওয়ার্ক পারমিট সার্কুলার অনুযায়ী আপনাকে কাজের জন্য আবেদন করতে হবে। রোমানিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার চাহিদা অনেক বেশি। বর্তমানে অনলাইনে রোমানিয়া ভিসার জন্য আবেদন করা যায়।

রোমানিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অনেক শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে থাকে। বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য শ্রমিক হিসেবে রোমানিয়ায় কাজের জন্য ভিসা আবেদন করেন। রোমানিয়াতে শ্রমিকদের বেতনও তুলনামূলক বেশি। আপনি যেকোন সময় অনলাইনে রোমানিয়া কাজের ভিসার অ্যাপ্লিকেশন করতে পারবেন। কোন এজেন্সির মাধ্যমে ওয়ার্কিং ভিসা করতে আপনার খরচ পড়বে প্রায় ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা।

রোমানিয়া স্টুডেন্ট ভিসা

আপনি ইচ্ছা করলে স্টুডেন্ট ভিসাতেও রোমানিয়া যেতে পারেন। স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করার জন্য যে যে ডকুমেন্টস লাগবে সেগুলো ঠিক থাকলে আপনি স্টুডেন্ট ভিসায় অ্যাপ্লাই করতে পারবেন। আর আপনি রোমানিয়াতে যেই ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যাবেন সেখানকার ইনভিটেশন লেটার ও থাকতে হবে।

স্টুডেন্ট ভিসায় রোমানিয়া যেতে হলে আপনার প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা লাগবে। তাছাড়া আপনি যদি সরকারিভাবে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যান তাহলে মাত্র ২ থেকে ৩ লাখ টাকার মত খরচ হবে। তাই চেষ্টা করবেন যেন স্কলারশিপ নিয়ে যেতে পারেন। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় রোমানিয়ায় পড়াশোনার খরচ তুলনামূলক কম। তাই আপনার যদি বিদেশে পড়াশোনা করার ইচ্ছা থাকে তাহলে আপনি রোমানিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।

রোমানিয়া টুরিস্ট ভিসা

প্রতিনিয়ত দেশ বিদেশে থেকে অনেক পর্যটনকারী রোমানিয়াতে ভ্রমণের জন্য যাচ্ছে। আপনি ভ্রমনের উদ্দেশ্যে রোমানিয়া যেতে ইচ্ছুক হলে আপনাকে টুরিস্ট ভিসায় যেতে হবে। রোমানিয়াতে অনেক সুন্দর ও আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান রয়েছে পর্যটনকারীদের জন্য। যেমনঃ ব্রান ক্যাসেল, দানিয়ুব ডেলটা, ক্লুজ নাপোকা, তিমিসোওয়ারা ইত্যাদি। টুরিস্ট ভিসার মেয়াদ থাকে ৯০ দিন অর্থাৎ ৩ মাস। আপনি অনায়াসে ৩ মাসের মধ্যে রোমানিয়ার সবগুলো দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে পারবেন।

আপনি যদি কোন এজেন্সির মাধ্যমে টুরিস্ট ভিসা করতে চান তাহলে আপনার খরচ পড়বে প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা। ভিসা আবেদন করার সময় আপনার ব্যাংক স্টেট্মেন্ট এবং ভ্রমণ করার জন্য অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিতে হবে। আপনার ডকুমেন্টস ঠিকঠাক হলে আপনি ১ মাসের মধ্যেই ভিসা পেয়ে যাবেন। আর ঘুরে আসতে পারবেন রোমানিয়ার সব মনোমুগ্ধকর দর্শনীয় জায়গা।

রোমানিয়া ভিসা সংক্রান্ত অন্যান্য প্রশ্নোত্তর

১। রোমানিয়া যেতে কত টাকা লাগবে?

উঃ বর্তমানে ভিসা, বিমান ভাড়া, অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচসহ রোমানিয়া যেতে প্রায় ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। 

২। রোমানিয়া যেতে কতদিন সময় লাগতে পারে?

উঃ আপনি কোন পরিবহনের মাধ্যমে রোমানিয়া যাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করবে সময়। আপনি যদি বিমানে করে যান তাহলে ম্যাক্সিমাম ১০ ঘণ্টা লাগবে আর জাহাজে করে গেলে লাগবে প্রায় ১০ দিন।

আরও পড়ুন

শেয়ার করুন

Leave a Comment