এশিয়ার জনপ্রিয় দেশগুলোর মধ্যে মানুষের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর। পর্যটন, উচ্চ শিক্ষা, চিকিৎসা কিংবা কাজের জন্য অনেকেরই পছন্দের দেশ সিঙ্গাপুর। আপনারা যারা প্রথমবারের মত সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন বা যেতে ইচ্ছুক তাদের অনেকেরই ভিসা চেক সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকে না।
অনেকে দালাল কিংবা ভিসা এজেন্টদের মাধ্যমে ভিসা করিয়ে থাকে এতে দেখা যায় অনেক সময় দালালরা জাল ভিসা ধরিয়ে দেয়। ফলে বিদেশে যেয়ে আপনাকে নানা ধরনের সমস্যা এবং আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
তাই প্রতারনা এবং অন্যান্য ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই বিদেশে যাওয়ার পূর্বে আপনি আপনার ভিসাটি ভালমতো চেক করে নিবেন।
আজকের আর্টিকেল-এ আমি সিঙ্গাপুর ভিসা চেক করার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানাবো। আশাকরি এতে আপনারা ঠিকভাবে অনলাইনে ভিসা চেক করে আপনার ভিসাটি আসল নাকি জাল তা যাচাই করতে পারবেন।
আর এখন ঘরে বসে কারও সাহায্য ছাড়াই নিজ মোবাইল, ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটার থেকে কয়েক মিনিটের মধ্যেই অনলাইনে ভিসা চেক করে নেয়া যায়।
সিঙ্গাপুর ভিসা চেক
সিঙ্গাপুর ভিসা চেক করার জন্য আপনার মোবাইল, ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার থেকে যেকোনো একটি ব্রাউজার ওপেন করে এই লিংকে ( www.mom.gov.sg/check-wp ) যেতে হবে। এরপর আপনার passport number এবং পাসপোর্টে থাকা date of birth লিখে সার্চ করলেই ভিসা চেক করতে পারবেন। আবার আপনি চাইলে foreign identification number দিয়েও এই ভিসা চেক করতে পারবেন।
পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে সিঙ্গাপুর ভিসা চেক
আপনি সিঙ্গাপুর ভিসার অনুমোদন পাওয়ার পর সেটির সত্যতা যাচাই করার জন্য পুনরায় অনলাইনে ভিসা চেক করে নিবেন। আর ভিসা যাচাই করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে পাসপোর্ট নাম্বার এবং পাসপোর্ট অনুযায়ী জন্ম তারিখ। অনলাইনে ভিসা স্ট্যাটাস চেক করার জন্য নিম্নোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করুনঃ
ধাপ ১ঃ প্রথমে যেকোনো একটি ব্রাউজার-এর সার্চবারে যেয়ে check work pass লিখে সার্চ করুন। সার্চ রেজাল্টে আসা প্রথম ওয়েবসাইটটি [ MOM | Check a work pass] ভিজিট করুন।
ধাপ ২ঃ তাহলে নিচের এই পেইজটি দেখতে পাবেন। তারপর আপনার সুবিধামত বাংলা অথবা ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ সিলেক্ট করুন।
ধাপ ৩ঃ নিচের পেইজটি আসার পর start অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৪ঃ এরপর date of birth বক্সে [ dd mmm yyyy ] এ আপনার জন্ম তারিখ/ মাস/ বছর এভাবে টাইপ করুন। আর passport number অপশনটি সিলেক্ট করে আপনার passport number লিখুন।
ধাপ ৫ঃ সবশেষে i’m not a robot ক্যাপচাটি পুরন করে submit অপশনে ক্লিক করুন।
এভাবে আপনি আপনার সিঙ্গাপুর ভিসা স্ট্যাটাস চেক করে ভিসার যাবতীয় ইনফরমেশন জানতে পারবেন। আর এই পদ্ধতিতে খুব সহজেই আপনি সিঙ্গাপুরের যেকোনো ধরনের ভিসা চেক করতে পারেন।
সিঙ্গাপুর যেতে কোন ভিসার খরচ কেমন পড়বে?
স্টুডেন্ট ভিসার খরচ
প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অনেক ছাত্র-ছাত্রী উচ্চশিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ভিসায় সিঙ্গাপুর যাচ্ছে। অনেকে আবার স্কলারশিপ নিয়েও সিঙ্গাপুরে পড়াশোনা করে থাকে। আর আপনি যদি স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন তাহলে স্টুডেন্ট ভিসায় সিঙ্গাপুরে যেতে আপনার খরচ পড়বে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকার মতন। আর যদি স্কলারশিপ ছাড়া কোনো এজেন্সির মাধ্যমে স্টুডেন্ট ভিসা করান তাহলে তুলনামূলক খরচ বেশি পড়বে প্রায় ৬ থেকে ৮ লক্ষ টাকার মত লাগতে পারে। তাই চেষ্টা করবেন যেন স্কলারশিপ নিয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় যাওয়া যায়।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ
প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ থেকে অনেক শ্রমিক নিচ্ছে সিঙ্গাপুর সরকার। যাদের কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া একটু সহজ। বর্তমানে সিঙ্গাপুর এজেন্সির মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা করতে চাইলে প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। তাহলেই আপনি সিঙ্গাপুরে একজন দক্ষ শ্রমিক হিসেবে যেতে পারবেন।
টুরিস্ট ভিসার খরচ
অনেক ভ্রমণপ্রেমী মানুষ আছে যারা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে পছন্দ করে। ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য সিঙ্গাপুর একটি সুন্দরতম দেশ। সিঙ্গাপুরের কিছু বিশেষ দর্শনীয় স্তানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সেন্তসা আইল্যান্ড, জুরং বার্ড পার্ক, বোটানিক গার্ডেন, চায়না টাউন। বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষের শখ থাকে সিঙ্গাপুরের এসব দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে যাওয়ার। বর্তমানে সিঙ্গাপুরের টুরিস্ট ভিসার আবেদন ফি ৩০০ ডলার। আর অন্যান্য সব খরচ মিলিয়ে মোট খরচ পরবে প্রায় ১.৫ থেকে ২ লক্ষ টাকা। তবে অন্যান্য দেশের চেয়ে সিঙ্গাপুর-এ যাতায়াত সহ সব কিছুর খরচ একটু বেশি।
সিঙ্গাপুরে যেতে কি কি ডকুমেন্টস লাগবে?
সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। আর ভিসার আবেদন করার জন্য আপনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস লাগবে। তা নাহলে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। তবে ভিসার ধরন অনুযায়ী আপনাকে ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে হবে। চলুন জেনে নিই ভিসার আবেদনের জন্য সাধারণত যে যে ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় তা হলোঃ
- একটি লিগ্যাল পাসপোর্ট ( মেয়াদ মিনিমাম ৬ মাস থাকতে হবে ও পাসপোর্ট এর ১ টি পাতা ফাঁকা থাকতে হবে ) ।
- আপনার সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ রঙ্গিন ছবি।
- সিঙ্গাপুরের কোন পরিচিত ব্যক্তির আমন্ত্রনপত্র এবং
- পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট।
- মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট।
- ব্যক্তিগত তথ্য যেমনঃ জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র।
- সিঙ্গাপুর ভিসার ফি প্রদান করতে হবে।
- করোনা ভ্যাক্সিন সার্টিফিকেট লাগতে পারে।
১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যে কেউ সিঙ্গাপুর ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে টুরিস্ট ভিসার জন্য সর্বনিম্ন ১৫ বছর হলেও চলবে।
FAQs
১। সিঙ্গাপুর ভিসা চেক করতে কি কি ডকুমেন্ট লাগে?
উঃ সিঙ্গাপুর ভিসা চেক করতে আপনার পাসপোর্ট নাম্বার এবং পাসপোর্ট এ দেওয়া জন্ম তারিখ প্রয়োজন। এই দুটি ইনফরমেশন দিয়ে আপনি অনলাইনে ভিসা চেক করতে পারবেন।
২। সিঙ্গাপুর ভিসা চেক করার সঠিক ওয়েবসাইট কোনটি?
উঃ সিঙ্গাপুর ভিসা চেক করার ওয়েবসাইট www.mom.gov.sg/check-wp ।
৩। পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে সিঙ্গাপুর ভিসা চেক করা যায়?
উঃ হ্যা, পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে সিঙ্গাপুর ভিসা চেক করা যায়।