বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এবং উন্নত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আমেরিকার অবস্থান শীর্ষে। আমেরিকা অনেকের চোখে এক স্বপ্নের দেশ!! যেখানে রয়েছে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা। অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং ব্যাবসা-বানিজ্য সব দিক থেকে আমেরিকা বিশ্বের অন্যতম একটি দেশ। প্রতি বছর অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী পড়ালেখার জন্য, কেউ চিকিৎসা, কেউ ভ্রমণ কিংবা ব্যাবসা করার জন্যও আমেরিকায় যেতে চায়। তাই এই পোস্টে আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা ২০২৪ নিয়ে আলোচনা করা হবে।
এখন আমেরিকা যাওয়ার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি আমেরিকান ভিসার। কিন্তু আমেরিকান ভিসা পাওয়া অতটাও সহজ কাজ নয়। সেজন্য আপনার যোগ্যতা এবং আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা থাকা জরুরি। তা নাহলে আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে!! তাই আজকের আর্টিকেলে কিভাবে সহজে আমেরিকার ভিসা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।
আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আমেরিকায় যাওয়ার কয়েকটি ভিসা ক্যাটাগরি রয়েছে, যেমন-স্টুডেন্ট ভিসা, টুরিস্ট ভিসা, কাজের ভিসা। ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী আপনাকে ভিসা আবেদনের শর্তগুলো পূরণ করতে হবে।
বর্তমানে আপনি ঘরে বসেই নিজের মোবাইল, ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটার থেকে অনলাইনে ভিসার জন্য আবেদন করা এবং ভিসা চেক করতে পারবেন। তাই দেরী না করে চলুন যেনে নেয়া যাক আমেরিকান ভিসা পেতে হলে কি কি যোগ্যতার প্রয়োজন।
আমেরিকান স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা
নিঃসন্দেহে পড়াশোনা করার জন্য আমেরিকা বিশ্বের সেরা দেশ। বিশ্বের টপ ইউনিভার্সিটিগুলোর বেশিরভাগই আমেরিকায় অবস্থিত। তাই প্রতি বছর বহু মাধাবী শিক্ষার্থী পড়াশোনা করার জন্য বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে চায়। তাই স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকা যেতে কি কি ডকুমেন্টস লাগবে চলুন তা জেনে নিই-
- একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকা আবশ্যক
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- আমেরিকায় যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাবেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির লেটার
- ইংরেজি ভাষার দক্ষতার সার্টিফিকেট ( IELTS, TOEFL )
- পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট
- মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট
- আমেরিকায় থাকা, খাওয়াদাওয়া, টিউশন ফি এবং অন্যান্য খরচ বহন করার মত আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমান । যেমনঃ ব্যাংক স্ট্যাট্মেন্ট, স্কলারশিপ।
- ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
- চারিত্রিক সনদপত্র
উপরে উল্লিখিত ডকুমেন্টস সমূহ USA ভিসা এজেন্সিতে জমা দিতে হবে। তবে প্রয়োজন সাপেক্ষে অন্যান্য আরও ডকুমেন্টস লাগতে পারে। তাই ইউএস এমব্যাসিতে আগে যোগাযোগ করে কি কি কাগজপত্র লাগবে তা ভালোভাবে জেনে নিবেন।
স্টুডেন্ট ভিসার খরচ
অনলাইনে আমেরিকান স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে আপনার প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা লাগবে। তবে পড়াশোনার খরচ আমেরিকায় অনেক বেশি প্রতি বছর প্রায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার ডলার লাগতে পারে। আর ৪ বছরে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করতে প্রায় ২০০ হাজার ডলার লাগবে। কিন্তু আপনি যদি স্কলারশিপ নিয়ে যেতে পারেন তাতে খরচ কিছুটা কম পরবে। আর পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করার অপশন ও রয়েছে। তাই আমেরিকায় পড়াশোনা করার উদ্দেশ্যে যেতে হলে সেখানকার যাবতীয় খরচ বহন করার মত সামর্থ্যও আপনার থাকতে হবে।
আমেরিকায় টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা
আমেরিকায় ভ্রমন করার ইচ্ছা কম বেশি সবারই থাকে। বিশ্বের অন্যতম সুন্দর রাষ্ট্র আমেরিকা। যেখানে পর্যটনের জন্য রয়েছে অসাধারণ সব সুন্দর ও নান্দনিক জায়গা। আর সেই সুন্দর সুন্দর জায়গা ভ্রমণ করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি টুরিস্ট ভিসার। আর টুরিস্ট ভিসা পেতে হলে আপনার যে সকল কাগজপত্র লাগবে তা নিচে দেওয়া হলো-
- একটি বৈধ পাসপোর্ট লাগবে
- অনলাইনে আমেরিকা ভিসা এপ্লিকেশন এর ওয়েবসাইটে যেয়ে এপ্লিকেশন ফর্ম-১৬০ পূরণ করতে হবে।
- আমেরিকায় যার কাছে যাবেন তার বিস্তারিত তথ্য ( নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার ইত্যাদি ) ফর্মে উল্লেখ করতে হবে।
- আপনি অন্যান্য কোন কোন দেশে ভ্রমণ করেছেন তার রেকর্ড
- ইংরেজি ভাষার দক্ষতার সার্টিফিকেট ( IELTS, TOEFL )
- ব্যাংক স্ট্যাট্মেন্ট
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- ভ্রমনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে হবে
- পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট
- মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট
টুরিস্ট ভিসার আবেদন ফি প্রায় ২০ হাজার টাকা। আমেরিকা ভিজিট করার কমপক্ষে ২ মাস আগে অনলাইয়নে এপ্লিকেশন ফর্মটি পূরণ করে রাখবেন।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার উপায়
আমেরিকায় অনেকেই জব করার জন্য আসতে চান। তাদেরকে অবশ্যই অনেক দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং পড়াশোনায় অনেক ভালো হতে হবে। তারপর ইংরেজি ভাষায় আপনি কতটা দক্ষ সেটাও যাচাই করতে হবে অর্থাৎ আপনার ILETS Score অনেক ভালো হতে হবে।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত H-1B ভিসা পাওয়াটা একটু সহজ। সেজন্য প্রথমে আপনাকে USA জব সার্চিং ওয়েবসাইট যেমন- Linkedin.com, Indeed.com etc. ওয়েবসাইটে জব এর জন্য় আবেদন করতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনি যে কাজের জন্য আবেদন করবেন সেই কাজে অবশ্যই আপনাকে পারদর্শী এবং অভিজ্ঞ হতে হবে। তা নাহলে আপনার জব অফার পাওয়ার পসিবিলিটি অনেক কমে যাবে। আমেরিকা প্রতি বছর H-1B ভিসায় নির্দিষ্ট পরিমাণ লোক নিয়ে থাকে বিশেষ করে যাদের সফটওয়্যার স্কিল অনেক ভালো তাদের জন্য জব পাওয়া সহজ।
ভিসার আবেদন করার সময় H-1B visa-র শর্তানুসারে আপনাকে যাবতীয় ইনফরমেশন ফিল আপ করতে হবে।
কাজের ভিসার আবেদন করার জন্য আপনাকে নিম্নোক্ত কাগজপত্রগুলো জমা দিতে হবেঃ
- একটি বৈধ পাসপোর্ট
- I-129 form
- যে কোম্পানিতে জব করতে যাচ্ছেন সেই কোম্পানির জব অফার লেটার
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- কাজের দক্ষতার সার্টিফিকেট
- কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র
- ইংরেজি ভাষার দক্ষতার সার্টিফিকেট
- মেডিকেল রিপোর্ট
- পুলিশ ভেরিফিকেশন এর সনদপত্র
কাজের ভিসার মেয়াদ সাধারণত ৬ বছর থাকে। আর কাজের ভিসার আবেদন ফি প্রায় ২৪ হাজার টাকা।
আশাকরি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি আমেরিকা ভিসা কিভাবে পাওয়া যায় সে সম্পর্কে অনেকটা ধারনা পেয়েছেন। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার করে পাশে থাকবেন।